পশ্চিমবঙ্গের পাখি প্রেমী অমরেশ মিত্র ও তার সংগ্রহ করা পাখির ডিম![West Bengal bird lover Amaresh Mitra and his collected bird eggs 1 188482548 3961113367303578 6912938959346312148 n](//sdsmartupdate24.in/wp-content/uploads/2021/05/188482548_3961113367303578_6912938959346312148_n-300x228.jpg)
অমরেশ মিত্র। কি যে চৌম্বক আকর্ষণী ক্ষমতা উনার আছে কে জানে! পশ্চিমবঙ্গের হেন কোন পাখি নেই যার ডিম তাঁর সংগ্রহে নেই। আমি তো তাঁকে পশ্চিমবঙ্গের সালিম আলি (পৃথিবী বিখ্যাত পক্ষী বিশারদ, bird lover) বলি। পাখি সম্পর্কে (bird lover) এমন পড়াশুনা, ফিল্ড ওয়ার্ক ও জ্ঞান খুব কম মানুষেরই আছে।
আমি সেদিন গিয়ে বললাম, আজ কোনো সিরিয়াস আলোচনা নয়। গল্প শুনবো। উনি হেসে বললেন বেশ তাই হোক। আজ তবে পাখিদের গল্প শোনো। আমার মন আনন্দে নেচে উঠলো।![West Bengal bird lover Amaresh Mitra and his collected bird eggs 2 188539218 3961113537303561 4767447525291311886 n](//sdsmartupdate24.in/wp-content/uploads/2021/05/188539218_3961113537303561_4767447525291311886_n-300x288.jpg)
![West Bengal bird lover Amaresh Mitra and his collected bird eggs 2 188539218 3961113537303561 4767447525291311886 n](http://sdsmartupdate24.in/wp-content/uploads/2021/05/188539218_3961113537303561_4767447525291311886_n-300x288.jpg)
উনি শো কেস খুলে দুটো কোটো বের করলেন। বললেন দেখো। দেখলাম। মূর্খের দৃষ্টি। তবুও যা বুঝলাম তা হলো দুটো কোটোতেই একই রকম দেখতে ডিম রয়েছে (bird lover)। উনি বললেন কাক আর কোকিলের গল্প তো জানো। আমি উনার কাছ থেকে জানা পাণ্ডিত্যই ফলিয়ে দিলাম। কোকিল কাকের বাসায় ডিম পাড়ে বলে কাককে পর-ভৃৎ বলে। হাসলেন অমরেশ। বললেন, সেটাই সবাই জানে। কিন্তু পাপিয়া যে ছাতারে পাখির বাসায় ডিম পাড়ে সেটা জানে ক’জন। কে কে জানে জানি না। কিন্তু আমি তো শুনে অবাক!![West Bengal bird lover Amaresh Mitra and his collected bird eggs 3 187485110 3961113017303613 4326240967789901805 n](//sdsmartupdate24.in/wp-content/uploads/2021/05/187485110_3961113017303613_4326240967789901805_n-224x300.jpg)
![West Bengal bird lover Amaresh Mitra and his collected bird eggs 3 187485110 3961113017303613 4326240967789901805 n](http://sdsmartupdate24.in/wp-content/uploads/2021/05/187485110_3961113017303613_4326240967789901805_n-224x300.jpg)
উনি বললেন, পাপিয়া চেন?
আমি বললাম, একজন পাপিয়াকে চিনি। আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড। উনি হেসে বললেন, আমি মানুষ নয়, পাখি পাপিয়ার কথা বলছি। বললেন আমরা সবাই তাকে চিনি, কিন্তু তার নামটা শুধু জানি না।
পাপিয়া বাসা তৈরী করে না। পাখিটিকে চেনার সহজ উপায় হলো গভীর জ্যোৎস্না রাতে ইনি ‘চোখ গেল চোখ গেল’ বলে ডাকেন। তার সেই তীব্র চিৎকারের জন্যে একে ব্রেন ফিভার বার্ডও বলে। এরা জোড়া বাঁধে না। প্রজনন ঋতুতে পুরুষ পাখিটি ‘পিউ কাঁহা পিউ কাঁহা’ বলে ডেকে সঙ্গিনী খোঁজে। এই পাপিয়া ছাতারে পাখির বাসায় ডিম পাড়ে। ডিমের আকার, আকৃতি, বর্ণ একই হওয়ার কারণে ছাতারে পাখি বুঝতেই পারে না যে ডিমটি পাপিয়ার।
এবার ঘুঘু পাখির গল্প। বাস্তু ঘুঘু, ভিটেয় ঘুঘু চড়ানো এসব তো প্রবাদ হয়ে গেছে। কিন্তু এই প্রবাদপ্রতিম পাখিটি সম্পর্কে অমরেশ মিত্র যা বললেন তা সত্যিই বিস্ময়কর। ঘুঘুর প্রথম মিলন যার সাথে হয় সারাটা জীবন সে তার সাথেই জীবন কাটিয়ে দেয়। এদের অভিধানে বিবাহ বিচ্ছেদ বলে কোন শব্দ নেই। কোন কারণে সঙ্গী বা সঙ্গিনী মারা গেলে অন্য ঘুঘুটি বাকি জীবনটা যথাক্রমে বিধবা বা বিপত্নীক হিসেবে কাটিয়ে দেয়। নো পরকীয়া, নো পুনর্বিবাহ। এবার বোঝা সহজ হবে কেন তাদের নিয়ে এইসব প্রবাদ।![West Bengal bird lover Amaresh Mitra and his collected bird eggs 4 188482548 3961113367303578 6912938959346312148 n 1](//sdsmartupdate24.in/wp-content/uploads/2021/05/188482548_3961113367303578_6912938959346312148_n-1-300x228.jpg)
![West Bengal bird lover Amaresh Mitra and his collected bird eggs 4 188482548 3961113367303578 6912938959346312148 n 1](http://sdsmartupdate24.in/wp-content/uploads/2021/05/188482548_3961113367303578_6912938959346312148_n-1-300x228.jpg)
বাবুই পাখির গল্প দিয়ে গল্পের ইতি টানলেন অমরেশ মিত্র। পুরুষ বাবুই পাখি হলো স্থপতি। আর নারী পাখি হলো আবহবিদ। পুরুষ বাবুই বাসা অর্ধেক বানিয়ে নারী পাখিদের তার তৈরী বাসা দেখতে ডাকে। তার ডাকে সাড়া দিয়ে মেয়েরা আসে, দেখে, উড়ে যায়। কিন্তু একজন এসে একটু বেশি উৎসাহ দেখায়। পুরুষের মনে আশার আলো জ্বলে ওঠে। সে এসে চুপটি করে বসে থাকে। পুরুষ পাখি বুঝতে পারে বাসা পছন্দ হয়েছে মেয়ের। কিন্তু সব অঙ্ক ওলোটপালোট হয়ে যায় নারী পাখিটি যখন উড়ে চলে যায়। বিমর্ষ হয়ে বসে থাকে সে।
কিন্তু কথায় আছে ‘মর্নিং শোজ দ্য ডেইজ’। ভোরবেলায় পুরুষ বাবুই পাখিটি হঠাৎই আবিস্কার করে গতকালের নারীটি এসে লাজুক মুখে বসে আছে তার তৈরী বাসাতেই। মিলে যায় দুটি মন, দুটি হৃদয়। ভালোলাগা, ভালোবাসাবাসি। পুরুষের অর্ধেক তৈরী বাসাকে সুখী গৃহকোন করতে দুটিতে মিলে দিনরাত এক করে। গোবর দিয়ে সিল করে দেয় ফুটোফাটা, নইলে ডিম যে মাটিতে পড়ে যাবে।
![West Bengal bird lover Amaresh Mitra and his collected bird eggs 5 187928877 3961113450636903 1718435326256231925 n](http://sdsmartupdate24.in/wp-content/uploads/2021/05/187928877_3961113450636903_1718435326256231925_n-300x230.jpg)
অমরেশ কুমার মিত্র l
অজানা নাম l অচেনা মুখ l তাইতো !!
খুবই স্বাভাবিক l কারণ নিজের ঢাক নিজে পেটানো স্বভাব বিরুদ্ধ তাঁর l নিভৃত সাধনায় নিমগ্ন থাকার পথিক তিনি l পৃথিবীর একজন অন্যতম ব্যক্তিগত সংগ্রাহক l তাঁর সংগ্রহের সাথে পাল্লা দেবার মতো আছে হয়তো হাতে গোনা কিছু সংগ্রাহক l দুরারোগ্য পারকিনসন রোগাক্রান্ত বিরাশি বছরের অশীতিপর বৃদ্ধ এখনও বুঁদ হয়ে আছেন নিজের সংগ্রহশালা নিয়ে l
কৃষ্ণনাগরিক এই মানুষটিকে আমার তরফ থেকে প্রণামl
নবম শ্রেণীর ছাত্র কিশোর অমরেশ চলেছেন রাস্তা দিয়ে। হঠাৎই কানে এলো একটি শিশু পড়ছে, কাকের বাসায় কোকিল ডিম পাড়ে এবং কাক কোকিল শাবককে পালন করে বলে কাককে পর- ভৃৎ বলে। বদলে গেল অমরেশের চিন্তার জগৎ। ভাবলেন দুটি ভিন্ন পাখি কিন্তু ডিম দেখতে একই রকম হয়! দেখতে হবে স্বচক্ষে l সেই শুরু পাখির ডিম সংগ্রহ করা l প্রথম সংগ্রহ ঘুঘু পাখির ডিম l পশ্চিমবঙ্গের হেন কোন পাখি নেই যার ডিম তাঁর সংগ্রহে নেই l মোট একশ কুড়ি রকমের পাখির ডিম সংগ্রহ করেছেন। যার মধ্যে বেশ কয়েকটি পাখি আমাদের আকাশ থেকে চিরতরে গেছে হারিয়ে l সাপ ও পরিযায়ী পাখির ডিমও আছে তাঁর কাছে l
১৯৬৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী স্লোগান দিলেন” জয় জওয়ান জয় কিষান” l জাপান থেকে উচ্চফলনশীল ধান আমদানি করা হবে। প্রমাদ গুনলেন অমরেশ কুমার মিত্র। হারিয়ে যাবে দেশের ধান l শুরু করলেন সংগ্রহ l পশ্চিমবঙ্গের আটটি জেলা থেকে সংগ্রহ করলেন ২২০ রকমের ধান l যার মধ্যে হারিয়ে গেছে অনেক প্রজাতিই।
![West Bengal bird lover Amaresh Mitra and his collected bird eggs 6 189513892 3961113750636873 2914897114548877044 n](http://sdsmartupdate24.in/wp-content/uploads/2021/05/189513892_3961113750636873_2914897114548877044_n-300x222.jpg)
উনাকে নিয়ে নানান খবরের কাগজে লেখা হয়েছে l উনিও লিখেছেন প্রচুর l পেশায় স্কুল শিক্ষক নেশায় সংগ্রাহক। পড়াশুনা করেছেন নিরন্তর l পেয়েছেন সংবর্ধনা l কিন্ত আদর্শ করেছেন ‘সিম্পল লিভিং হাই থিংকিং’কে। উনার সংগ্রহ নিয়ে লিখতে গেলে মহাভারতের একটি ক্ষুদ্র সংস্করণ হয়ে যাবে।