Govt Schemes

মৃতদেহকে ‘অপবিত্র’! তাই সাজিয়ে খেতে দেওয়া হয় শকুনদের!

মৃতদেহ নিয়ে এমনই এক অদ্ভুত প্রথা প্রচলিত রয়েছে পার্সি সমাজের মানুষের মাঝে। পার্সি ধর্মাবলম্বীদের প্রথা অনুসারে, তাদের কোনো প্রিয়জনের মৃত্যু হলে তারা মৃতদেহের সৎকার করেন না। মৃতদেহ কবর দেয়া বা পুড়িয়ে ফেলার সংস্কারেও তারা বিশ্বাসী নয়। মৃতদেহ খোলা স্থানে রেখে দেয়াই যেন এক ধর্মীয় রীতি। পার্সি বা জরথ্রুষ্টিয়ান বা জোরাস্ট্রিয়ানরা এই ধর্মীয় রীতিনীতিতে বিশ্বাসী।তারা মৃত্যুর পরে দাহ বা সমাধি‚ কোনোটিই করে না। উঁচু এক মিনারে মৃতদেহ রেখে দেয়াই তাদের সৎকার।

সেই দেহ ভক্ষণ করে শকুনের দল। তাতেই নাকি মৃত ব্যক্তির সমস্ত পাপ মোচন হয়। আপাত নৃশংস হলেও পার্সিদের এই রীতির নেপথ্যে আছে বাস্তবসম্মত কারণ। আর তা হলো মিতব্যয়িতা। এতে কোনো জ্বালানি লাগে না। সমাহিত করার ব্যয়ও নেই। ফলে খরচ কম। তাছাড়া‚ এতে ধনী-দরিদ্র বিভাজনও ধরা পড়ে না। পার্সিদের অন্ত্যেষ্টির এই রীতিকে অনেকেই বলেন ‘গ্রিনেস্ট ওয়ে’। এর ফলে জ্বালানির নিধন হয় না। বিলুপ্তপ্রায় শকুনদের খাবারের যোগান হয়। একে একদিকে পার্সিরা সেবা হিসেবেও দেখেন। অর্থাৎ নশ্বর দেহ দিয়ে প্রাণীদের সেবা।

মৃতদেহকে টাওয়ার অব সাইলেন্সে রেখে আসার পক্ষে পার্সি ধর্মাবলম্বীদের যুক্তি ছিলো ভিন্ন। পাঁচ হাজার বছর পূর্বে পৃথিবীতে এমন এক সমাজ ছিল যেখানে গোর খননের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। কবর না দেয়ার কারণে মৃতদেহ পঁচে যাতে জীবিত মানুষকে অসুস্থ ও জীবাণু আক্রান্ত করতে না পারে সেজন্য মৃতদেহকে সমাজ থেকে দূরে কোথাও ফেলে আসার ব্যবস্থা করা হয়। এ ব্যবস্থা অনুসরণের মধ্য দিয়ে সমাজের কোনো বিনাশ না ঘটিয়ে মৃতদেহকে পশু পাখিদের ভক্ষণের জন্য রেখে আসাটাই ছিল সৎকারের নিয়ম। এরপর থেকেই লোকাচারের সূচনা এবং তা পরবর্তীতে পার্সিদের ধর্মীয় ব্যবস্থার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে পড়ে।

টাওয়ার অব সাইলেন্সে দল বেঁধে বসে থাকে শকুনের দল। সৎকারে আসা মানুষদেরকে অবশ্য তারা কখনো আক্রমণ করে না। তবে বর্তমানে শকুনের সংখ্যা কমেছে। ফলে নৈঃশব্দ্যের মিনারে জমে থাকা মৃতদেহের সদ্ব্যবহার করার জন্য কেউ থাকে না। থেকেই যায় পরিবেশ দূষণের আশঙ্কা। এই মিনার থেকে যাতে বৃষ্টির জল বাইরে বেরিয়ে না আসতে পারে তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থাও রয়েছে। ওই জল চলে যায় মাটির নীচে গভীর কুয়ায়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button