ফিজেট স্পিনার কি (What is Fidget Spinner) ?
Contents
Fidget spinner: ফিজেট স্পিনার ২০১৭ সালের জনপ্রিয়তা পাওয়া একটি খেলনা। যদিও এটি আবিষ্কার হয়েছিল ১৯৯৩ এর দিকে। ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে বয়স্ক মানুষের কাছেও এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আমাজন এর ২০১৭ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী এটি তাদের সর্বোচ্চ ২০ টি বেস্ট সেলিং খেলনার মাঝে একটা ছিল। এই খেলনার এত জনপ্রিয়তার কারণ কি? চলুন জেনে নেয়া যাক।
ফিজেট স্পিনার হল এমন এক খেলনা যা স্ট্রেস বা চাপ কমাতে এবং মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। খেলনাটি কে এমনভাবে মার্কেটিং করা হয়েছে যে, এটি মানসিক চাপে পর্যুদস্ত কিংবা কোথাও মনোযোগ দিতে পারছেন না এমন অনেক ব্যক্তিকে সাহায্য করছে তাদের এই সমস্যা থেকে উত্তরণে। এমন ও দাবী করা হয়েছে, এটি অস্থির কিংবা বিভিন্ন মানসিক রোগে ভোগা কোনো মানুষকে শান্ত করতে সাহায্য করে। যেমন, ADHD এবং autism.
তবে বৈজ্ঞানিকভাবে এখনো প্রমাণ হয়নি এটা ADHD এবং autism এসব রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য কতটা কার্যকরী!
ফিজেট স্পিনার (Fidget spinner) এটি আবিষ্কারঃ, invention of Fidget spinner
Catherine Hettinger নামের এক কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার কে প্রাথমিকভাবে এর আবিষ্কারক মনে করা হয়েছিল। The Guardian, The New York Times, এবং New York Post এর মত পত্রিকাগুলোতেও এমনি ছাপা হয়েছিল। কারণ Catherine Hettinger ১৯৯৩ সালের দিকে একটা ঘূর্ণন খেলনার জন্য পেটেন্ট ফাইল করেছিলেন।
পরে তার নামে সেটি ইস্যুও হয়। কিন্তু কোনো ব্যবসায়িক স্পন্সর না পাওয়ার কারণে তিনি পরে আর সেটি রিনিউ করেন নি। সত্যিকার অর্থে তার কাছে সেই সময় রিনিউ করার মত ফি ছিলনা। আর পেটেন্ট এর মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে যে কোনো কোম্পানী স্বাধীনভাবে উক্ত পণ্য উৎপাদন এবং বাজারজাত করতে পারে।
Hettinger এর ডিজাইন করা স্পিনার টি উপরের ছবির মত ছিল। বর্তমানে যে স্পিনার বহুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে সেটির ডিজাইন যদিও এটির মত নয়।
কিভাবে তৈরি করা যায়?
এটি বিভিন্ন ধাতু দিয়ে তৈরি হতে পারে। যেমন, ব্রাশ, স্টেনলেস স্টীল, তামা, টাইটানিয়াম,প্লাস্টিক ইত্যাদি।
কর্মপদ্ধতিঃ
তবে এটি YO-Yo বা এই ধরনের অন্য খেলনাগুলোর মত নয়। এটি ঘুরাতে হাতের কিছু প্রেশার খরচ করতে হবে আপনাকে। সাধারণত এটি দেখতে দুই বা তিন বাহুওয়ালা চাকতির মত যার গোলাকার একটি কেন্দ্র আছে। ওই কেন্দ্র আঙ্গুলের মাথায় রেখে এটি ঘুরাতে হয়, সাথে সাথে আঙ্গুলের ব্যালেন্স ও ঠিক রাখতে হয়।
এটি টেবিল বা এই টাইপ কোনো তলের উপর রেখেও ঘুরানো যায়। ঘোরার সময় যেন ভারসাম্য বজায় থাকে এজন্য প্রতিটি স্পিনার এর বাহুগুলোর মাথায় ওজন কিছুটা বেশি থাকে। যারা এটি খেলেছেন তাদের মতে, এর ঘূর্ণন মস্তিষ্কে এক মনোরম সংবেদী অনূভুতি সৃষ্টি করে থাকে। যার ফলে খুব স্ট্রেস বা মানসিক চাপ অবস্থায় এটি খেললে মানসিক চাপ অনেকটা কম অনূভুত হয়। কারণ এটি আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করে আপনাকে ব্যস্ত রাখবে।
Advantage of Fidget spinner , উপকারিতাঃ
- অটিজম বা এই ধরনের কোনো রোগে আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা অনেক সময় রোগীর মনোযোগ আকর্ষণের জন্য কুশ বল বা এই জাতীয় খেলনা ব্যবহার করে্ন। সেক্ষেত্রে এখন ফিজেট স্পিনার ও অনেক কাজের বলা যায়।
- যারা কর্মক্ষেত্রে খুব ব্যস্ত সময় কাটায় তাদের জন্য এটা ভালো একটা শর্ট টাইম রিলিফ হতে পারে। কাজের ফাঁকে কিছুক্ষণ এই স্পিনার নিয়ে খেলা তাদের কাজের চাপ কিছুটা কম অনুভব করতে সাহায্য করে।
- যেসব বাচ্চারা দ্রুত রেগে যায় কিংবা মানসিক বিষাদে ভুগে তাদের ক্ষেত্রে ও এটি ভালো ভূমিকা পালন করে।
- ফিজেট স্পিনার এর যে উপকারগুলো শক্তভাবে দাবী করা হয় তার মাঝে একটি হল ফোকাস ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়া। এই ধারণার উৎপত্তি নিয়ে বিশেষ জানা যায়না। তবে স্পিনার এর কর্মপদ্ধতি দেখে অনুমান করা যায়। যেহেতু এটি মনোযোগ আকর্ষণে সক্ষম সেহেতু এটা নির্দিষ্ট দিকে ফোকাস ক্ষমতা বাড়াতে হয়ত সাহায্য করে। তবে এটি এখনো বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়নি। বরং ফোকাস বাড়ানোর জন্য বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত কিছু উপায় আছে। যেমন, মেডিটেশান।
Disadvantages of fidget spinner, অপকারিতাঃ
ফিজেট স্পিনার এর কিছু অপকারিতাও উঠে এসেছে বিভিন্ন আলোচনা এবং পরিসংখ্যানে। যেমন, এটি শিশু কিশোরদের মাঝে এতই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে যে বেশিরভাগ শিশু কিশোর তাদের ক্লাসরুমে এটি নিয়ে যেত। অনেকে সেটা কেনা বেচা করাও শুরুও করেছিল। আমেরিকার কিছু স্কুলের শিক্ষকদের মতে, ফিজেট স্পিনার এর প্রতি অতিরিক্ত আকর্ষণ শিশুদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। এবং ফলাফল হিসেবে অনেক স্কুল ফিজেট স্পিনার স্কুলে নিয়ে আসা নিষিদ্ধ করে দিয়েছে।
এক সার্ভে রিপোর্ট অনুযায়ী, আমেরিকার ২০০ বড় স্কুলগুলোর প্রায় ৩২% স্কুলে এটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
২০১৭ সালে যখন এটি খুব জনপ্রিয় হয়ে গেল তখন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় এর মার্কেটিং কৌশল হিসেবে এটি ADHD এবং autism এসব রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য অনেক উপকারী হিসবে প্রচার করা হয়েছে বলে অনেকে দাবী করেছেন। কারণ এই দাবীর পক্ষে এখন পর্যন্ত কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি।