Netaji Subhash Chandra Bose Biography in Bengali: ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক ছিলেন সমগ্র বাংলা তথা বাঙালীর গর্ব, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু | ভারতের স্বাধীন হওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর অসামান্য অবদান আমাদের কারোরই ভোলার নয় | তিনি দেশের জন্য যা করে গেছেন, তা হয়তো অনেক রাজনৈতিক নেতারাও করেননি জীবনে |
![Netaji Subhash Chandra Bose Biography in Bengali 1 Netaji Subhash Chandra Bose Biography in Bengali](http://sdsmartupdate24.in/wp-content/uploads/2021/01/subhas-chandra-bose_650x400_71516621127-300x185.jpg)
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর জন্ম হয় ১৮৯৭ সালের ২৩শে জানুয়ারী, বর্তমান ওড়িশার কটক শহরে | তাঁর বাবার নাম ছিলো শ্রী জানকীনাথ বসু, যিনি কিনা সেইসময়ের কটক শহরের একজন বিখ্যাত আইনজীবী ছিলেন এবং মা ছিলেন শ্রীমতী প্রভাবতী দেবী |
Subhash Chandra Bose Education:
ছোটবেলা থেকেই সুভাষচন্দ্র, পড়াশোনার বিষয়ে ভীষন মনোযোগী ছিলেন, আর তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় কটকের এক প্রোটেস্ট্যান্ড ইউরোপীয় স্কুল থেকে | এরপর ১৯০৯ সালে তিনি সেখান থেকে ভর্তি হন কটকের রাভেনশো কলেজিয়েট স্কুলে | স্কুলে পড়ার সময়, তিনি সেই স্কুলের প্রিন্সিপাল বেনিমধাব দাসের ব্যক্তিত্বের উপর বিশেষভাবে প্রভাবিত হন এবং তাঁরই সহযোগীতায় ছোট্ট সুভাষ, স্বামী বিবেকানন্দের বই পড়তে আগ্রহী হয়েও পরেন | সুভাষচন্দ্র বোস অবশ্য পরবর্তীকালে তাঁর লেখায় এটা উল্লেখ করেছিলেন যে, স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও লেখা বই তাঁকে একজন স্বাধীনতা সংগ্রামীতে পরিণত করেছিলো | স্বামীজির লেখা বই পড়েই তিনি তাঁর জীবনের আসল উদ্দেশ্য খুঁজে পান |
Subhash Chandra Bose Political Career:
কোলকাতায় পড়াশোনা শেষ করে সুভাষচন্দ্র বসু, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত ফিজউইলিয়াম কলেজে উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হন । সেখানে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান অধিকার করে তিনি প্রায় নিয়োগপত্র পেয়ে যান, কিন্তু বিপ্লব সচেতন দৃষ্টিভঙ্গি হওয়ার জন্য সেই নিয়োগও প্রত্যাখ্যান করেন | চাকরি প্রত্যাখ্যান করার পর তিনি আবার ইংল্যান্ড ছেড়ে ভারতে চলে আসেন এবং এখানে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান করেন | সেই দলে ঢোকার তাঁর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিলো, ভারতকে যেভাবেই হোক ব্রিটিশদের হাত থেকে স্বাধীন করে তোলা |
![Netaji Subhash Chandra Bose Biography in Bengali 2 Netaji Subhash Chandra Bose Biography in Bengali](http://sdsmartupdate24.in/wp-content/uploads/2021/01/Subhas_Chandra_Bose_in_Germany-300x169.jpg)
১৩ই এপ্রিল ১৯১৯, যখন অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালা বাগ হত্যাকাণ্ড ও দমনমূলক রাওলাট আইন সমস্ত ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের বিক্ষুব্ধ করে তোলে । এইরুপ বিশৃঙ্খলার পর, নেতাজী ‘স্বরাজ’ নামক একটি খবরের কাগজের হয়ে লেখালেখি শুরু করেন এবং বঙ্গীয় প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির প্রচারের দায়িত্বে নিযুক্ত হন |
এরপর চিত্তরঞ্জন দাশ ১৯২৪ সালে যখন কলকাতা পৌরসংস্থার মেয়র হন, সেইসময় সুভাষচন্দ্র বসু তাঁর অধীনে কাজ করতেন । চিত্তরঞ্জন দাশই ছিলেন তাঁর রাজনৈতিক গুরু, কারণ তাঁর কাছ থেকেই সুভাষচন্দ্রের রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় | তার ঠিক পরের বছর অর্থ্যাৎ ১৯২৫ সালে অন্যান্য জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে তাঁকেও বন্দি করা হয় | তিনি তাঁর ২০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে, প্রায় ১১ বার গ্রেফতার হন ব্রিটিশদের হাতে | সুভাষচন্দ্র বোসের হৃদয় জাতীয়তাবাদের ধারায় ভরা ছিল, তাই স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য তাঁর ভীতর জাতীয়তাবাদী মনোভাব, ব্রিটিশদের কাছে খুব ভালো খবর ছিলোনা | তাই তাঁরা প্রত্যেকে সুভাষচন্দ্রের প্রতি সর্বদা সতর্ক থাকতেন |
1938? Tripura session:
![Netaji Subhash Chandra Bose Biography in Bengali 3 Netaji Subhash Chandra Bose Biography in Bengali](http://sdsmartupdate24.in/wp-content/uploads/2021/01/Netaji-Subhas-Chandra-Bose-300x167.jpg)
১৯৩৮ সালে তিনি ভারতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন আর ১৯৩৯ সালে তিনি দ্বিতীয়বারের জন্য ত্রিপুরা অধিবেশনে কংগ্রেসের সভাপতি হিসাবে নির্বাচিত হন । সুভাষচন্দ্র বসু এই নির্বাচনে জয়লাভ করলেও গান্ধীজির বিরোধিতার ফলস্বরূপ তাকে বলা হয় পদত্যাগ পত্র পেশ করতে; নাহলে কার্যনির্বাহী কমিটির সব সদস্য পদত্যাগ করবে । এইসব নানা কারণে তিনি অবশেষে নিজেই কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করেণ এবং “ফরওয়ার্ড ব্লক” নামক একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন । অবশেষে তাঁর দলের একজন সদস্যকে নিয়ে তিনি, আফগানিস্তান ও সোভিয়েত ইউনিয়ন হয়ে জার্মানি পালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেন | সেখানে গিয়ে তিনি প্রথমে বার্লিনে “ভারতীয় মুক্ত কেন্দ্র” গড়ে তোলেন, আর তারপর ভারতের স্বাধীনতার জন্য তিনি জার্মান নেতা এডলফ হিটলারের সাহায্য চান |
কিন্তু ভারতের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সাহায্যের ব্যাপারে এডলফ হিটলারের কোনো ইচ্ছা না থাকায়, তিনি তা বুঝতে পেরে খুব দুঃখ পান | এরপর ১৯৪৩ সালে তিনি অবশেষে জার্মানি ত্যাগ করেন এবং একটি সাবমেরিনে চেপে পোঁছে যান জাপানে, হিদেকি তোজোর সাহায্যের আশায় | সেইসময় জাপানে রাসবিহারি বসু গড়ে তুলেছিলেন ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনী | ১৯৪৩ সালে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর হাতে তিনি সেই বাহিনীর দায়িত্ব তুলে দেন | নারী-পুরুষ মিলিয়ে এই বাহিনীতে মোট সৈন্য সংখ্যা ছিলো প্রায় ৮৫০০০ মতো | পরে অবশ্য এই বাহিনীর নাম বদলে “আজাদ হিন্দ” করে দেওয়া হয় |
Netaji and his Azad Hind Bahini (নেতাজী ও তাঁর আজাদ হিন্দ বাহিনী)
![Netaji Subhash Chandra Bose Biography in Bengali 4 নেতাজী ও তাঁর আজাদ হিন্দ বাহিনী](http://sdsmartupdate24.in/wp-content/uploads/2021/01/WhatsApp-Image-2021-01-23-at-11.59.16-AM-265x300.jpeg)
সুভাষ চন্দ্র বসু আশা করেছিলেন, ব্রিটিশদের উপর তাঁর সৈন্যবাহিনীর হামলার খবর শুনে বিপুল সংখ্যক সৈন্য ভারতীয় সেনাবাহিনী থেকে হতাশ হয়ে সেখানে যোগ দেবে কিন্তু তা একদমই হয়নি | কারণ খুব সংখ্যক ভারতীয় সেনা সেই হামলার পর তাঁর বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলো | দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে যখন জাপান আত্মসমর্পণ করে আমেরিকার কাছে, তখন সেইসাথে তাঁর জাতীয় সেনাবাহিনীও আত্মসমর্পণ করে নেয় |
Death Of Subhash Chandra Bose:
জাপানের এই ঘোরতর দূর্দশার পর নেতাজী, ১৮ই আগস্ট ১৯৪৫ সালে জাপানের তাইহুকু বিমানবন্দর থেকে প্লেনে করে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনার কবলে পরেন এবং সেইসাথে মারা যান | যদিও তাঁর এই মৃত্যুর সত্যতা সম্পর্কে আজও মানুষ অজানা | কেউ ঠিক ভাবে জানেন না যে, সেই দিনটির পর নেতাজীর কি হলো | নেতাজী যা করে গেছেন আমাদের ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য, তা আমরা কখনই ভুলতে পারবোনা | তাঁর অবদান প্রত্যেকটা ভারতবাসী চিরকাল মনে রাখবে | তিনি সর্বদা আমাদের মধ্যে অমর হয়ে আছেন এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছেও অমর হয়েই থাকবেন |