HomeSocial Newsরাজস্থানের বিকানের করনি মাতা’র মন্দির ,মন্দিরের ভেতরে ঘুরে বেড়ানো কালো ইঁদুরেরা...

রাজস্থানের বিকানের করনি মাতা’র মন্দির ,মন্দিরের ভেতরে ঘুরে বেড়ানো কালো ইঁদুরেরা এখানে পবিত্র।

WhatsApp Group Join Now
Instagram Profile Join Now
YouTube Channel Subscribe

করনি মাতার মন্দির। হ্যাঁ একদম ঠিক শুনেছেন। করনি।

রাজস্থানের বিকানের সেখান থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে দেশনোক। আর এই দেশনোকেই রয়েছে দেবী করনি আর তার ২৫-৩০ হাজার সন্তান ইঁদুরদের মন্দির। আর দেবী করনির মন্দিরের বিশেষত্ব এই ইঁদুরেরাই। চতুর্দশ শতকে হিন্দু সন্ন্যাসিনী করনি বা করনা বা কারনি (তিনটি নামই প্রচলিত) মাতা তাঁর অনুগামীদের কাছে পূজিত হতেন দুর্গার অবতার হিসবেই।

যোধপুর ও বিকানেরের রাজপরিবারেও তাঁর প্রভাব ছিল অসীম, এই রাজপরিবারের কাছে তিনি দেবীস্বরূপ।

সন্ন্যাসিনী করনি জীবদ্দশাতেই কিন্তু কিংবদন্তী হয়েছিলেন এবং এই দেবীত্ব অর্জন করেছিলেন মানুষের কাছ থেকে। কিন্তু একদিন হঠাত করেই রহস্যময়ভাবে অন্তর্ধান হয়ে যান তিনি। কারো কারো মতে গুম খুন হন তিনি কারণ, দুই রাজপরিবারে তার বিশাল প্রভাব ছিল, অনেকসময় রাজ্য পরিচালনাতেও তার মতামতকেই মান্যতা দিতেন ওই দুই দেশীয় রাজপরিবার। তাঁর অন্তর্ধানের পর পরই বিকানের রাজপরিবার ওই মন্দিরটির প্রতিষ্ঠা করে।

মন্দিরের ভেতরে ঘুরে বেড়ানো কালো ইঁদুরেরা এখানে পবিত্র।

স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, এই ২৫ থেকে ৩০ হাজার ইঁদুর হলেন করনি মাতার বংশধর। এদের নাম কাব্বাস। শুধু ইঁদুর দর্শনেই দূরদূরান্ত থেকে হাজির হন ভক্তকুল। তবে সবচেয়ে বেশি শ্রদ্ধা পায় সাদা ইঁদুরেরা। কারণ এরা হলেন স্বয়ং করনি মাতা এবং তার গর্ভজাত সন্তান। এ নিয়ে কম গল্পও চালু নেই। একাংশের মতে করনি মাতার শত শত সন্তান এবং সৎ ছেলে লক্ষ্মণ কপিল সরোবরে জল খেতে গিয়ে ডুবে যায়। এরপরই করনি মাতা যমরাজের শরণাপন্ন হন তাদের বাঁচাতে। যমরাজ লক্ষ্মণসহ করনি মাতার সব সন্তানদের ইঁদুর হিসেবে পুনর্জন্ম দেন।

আরেকটি গল্প হল, ২০ হাজার সৈনিক বিকানেরের কাছাকাছি কোনো যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেন দেশনোকে। সৈনিকদের জন্য যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালানো গুরুতর অপরাধ। কিন্তু দয়াশীলা করনি মাতা দয়াপরবশত তাদের প্রাণ নেননি, কিন্তু শাস্তি স্বরূপ তাদের ইঁদুরে রূপান্তরিত করে মন্দিরেই থাকার ব্যবস্থা করেন।

এখানেই শেষ নয়। ইঁদুরের সম্মান এখানে দেবীর চেয়েও বেশি হয়ে ওঠে কখনও কখনও। যদি কোনো ইঁদুর মন্দিরে ভক্তদের দেওয়া প্রসাদ খায় তাহলে সেই ভক্তের জন্য তা সম্মানের। এবং ইঁদুর খাওয়া প্রসাদ পাওয়ার জন্য লাইন দেখলে তাক লেগে যাবে। মন্দিরে প্রবেশ করলেই দেখা যায় হাজারে হাজারে ইঁদুর ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা হেসে খেলে লাফিয়ে চড়ে বেড়াচ্ছে দর্শনার্থীদের পায়ের উপর। কিন্তু ভয় পাওয়া যাবে না, বা ঝেড়ে ফেলা যাবে না। যদি ভয় পেয়ে বা ভুলবশত কোনো দর্শনার্থীর পায়ের তলায় চলে, আসে কোনো ইঁদুর তাহলে সেই ইঁদুরের সাইজে একটি সোনার ইঁদুর মন্দিরকে গড়ে দিতে হবে তাকে। আর সাদা ইঁদুরের দেখা পাওয়া ভক্ত তো সৌভাগ্যবান বলে বিবেচিত হন।

Google News View Now

করনি দেবীর এই মন্দিরের দ্বার উন্মুক্ত হয় প্রতিদিন ভোর চারটের সময়। আর তারপর থেকেই হুড়োহুড়ি পড়ে যায় ইঁদুরদের নানান উপহার দেওয়ার। নবরাত্রিতে লক্ষ লক্ষ দর্শনার্থী পায়ে হেঁটে আসেন মন্দিরে। তবে ধর্ম বাদ দিলেও ভারতের প্রাচীন মন্দিরগুলির মতো এই মন্দিরটির স্থাপত্য এবং ভাস্কর্য কিন্তু চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। বছরে দুবার এই দেশনোকে বসে মেলা, মেলার নাম করনি মেলা।


নামের কী অদ্ভুত লীলা, না? যে রোগ এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বিশ্বব্যাপী, তারই সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে এক দেবীর মন্দির রয়েছে এ-দেশেই। আর সেখানে পবিত্র হল খোদ ইঁদুর। ভারত সত্যিই বিচিত্র, কী বলেন?
WhatsApp Group Join Now
Google News View Now
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular