পূর্ব বর্ধমানের গুসকরার এক ছেলে বানিয়ে ফেলল অটোমেটিক সোলার ওয়াটার পাম্প সিস্টেম (Automatic solar water pump system)।
Automatic solar water pump system: পুরো বিশ্ব এখন করোনা নামক মহামারীতে অস্থির, স্কুল , কলেজ সব বন্ধ। এই পরিস্থিতি কবে ঠিক হবে তার কোন ঠিক নেই। দেখা দিয়েছে অক্সিজেনের (O2) ঘাটতি, জানিনা ভবিষ্যতে আরো কত কি ঘটতে পারে এই পৃথিবীতে। এখন যেমন অক্সিজেনের ঘাটতি , ঠিক এমনই অনুমান করা হচ্ছে ভবিষ্যতে পানীয় জলের ঘাটতিও হতে পারে।
ঠিক এমন সময় কিছু মেধাবী শিক্ষার্থী নিজেদের পড়াশোনা কে কাজে লাগিয়ে যুগান্তর আবিষ্কার করে থাকেন । তেমনি এক আবিষ্কার করে ফেললেন পূর্ব বর্ধমানের গুসকরা এক ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র মৃন্ময় কাঞ্জিলাল। মৃন্ময় কাঞ্জিলাল বানিয়ে ফেললেন একটি অটোমেটিক সোলার সিস্টেম দ্বারা চালিত ওয়াটার পাম সিস্টেম (Automatic solar water pump system)।
কি এই সিস্টেম? কি কাজে লাগবে আমাদের ? কেন দরকার পরল এমন সিস্টেম বানানোর ? আসুন জেনে নেয়া যাক–
মৃন্ময় কাঞ্জিলাল জানান, প্রকৃতি থেকে দেওয়া মূল্যবান জিনিস এর মধ্যে একটি হচ্ছে জল, জল ছাড়া আমরা এক মুহুর্ত থাকতে পারবো না। সকালে ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে রাত্রে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত আমাদের জলের প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের কিছু গাফিলতি ফলে আমরা এই জলকে বাঁচাতে পারছিনা । আমরা অপচয় করেছি জলকে ।
তেমনি একটা জলের অপচয় জায়গা হচ্ছে আমাদের গৃহস্থবাড়ির ওয়াটার ট্যাংক (Water tank) , আমরা সবাই নিজেদের বাড়ির ওয়াটার ট্যাংক- এ (Water tank) জল ভরার জন্য ওয়াটার পাম্প (Water Pump) অন করি , কিন্তু টাইম মতো সেটা বন্ধ করতে ভুলে যায় , যার ফলে প্রচুর জল ট্যাংকি থেকে বাইরে উপচে পড়ে যায় এবং তার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের অপচয় হয়। এমনই ঘটনা আমাদের বাড়িতে প্রত্যেকদিন ঘটে থাকে । তাই আমার মাথায় এলো এমন কিছু একটা বানাতে হবে যেখানে জল এর সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ কেও বাঁচানো যায়।
আমি গুগলে (Google) এটা নিয়ে পড়াশোনা করলাম, দেখলাম অনেক রকম প্রজেক্ট (Project) রয়েছে যেখানে বাড়ির গৃহস্থলীর ওয়াটার পাম্প অটোমেটিক (Automatic ) বন্ধ হয়ে যাবে ট্যাংকি জলপূর্ণ হয়ে গেলে। কিন্তু এইসব প্রজেক্ট গুলিতে অনেক রকম সমস্যা রয়েছে। তাই আমি ভাবলাম কী করে এই সমস্যার গুলোকে সমাধান করে আমার বাড়িতে এই সিস্টেমটি ইনস্টল করা যাবে ?
যেমন সমস্যাগুলি হচ্ছে প্রথমত, টাংকি ভরে যাবার সঙ্গে সঙ্গে ওয়াটার পাম্প অফ হয়ে যায়, তবে যখনই ট্যাংকিটি সামান্য খালি হয়ে যায় আবার পম্পিটি অন হয়ে যায়, এই প্রসেস কমাগত সারাদিন ঘটে, যার ফলে পাম্প অনেকবার অন এবং অফ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চলে ,এতে পামটি নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়, এবং বিদ্যুৎ খরচ বেশি হয়।
MORE: International Journal এ স্বীকৃতি পেল এক বাঙালির আবিস্কৃত মহিলা সুরক্ষাকারী জুতা| পড়ুন বিস্তারিত |
দ্বিতীয়তঃ হচ্ছে বাড়িতে থাকা পম্পিটি আর বাড়ির ছাদের অবস্থিত ট্যাংকিতে এদের দূরত্ব অনেক বেশি থাকায় এই ধরনের সিস্টেম ইনস্টল করতে প্রচুর পরিমাণে তার (Wire) প্রয়োজন পড়ে এবং এগুলি প্রচুর বিদ্যুৎ খরচ করে, এবং এগুলি মেইনটেনেন্সের চাপ বেশি।
তৃতীয় তো হচ্ছে এই সিস্টেমগুলি বাড়িতে ইন্সটল করলে কিছুদিন পর এগুলি নষ্ট হয়ে যায় কারণ ট্যাংকিতে লাগানো যে তার (Wire) গুলি থাকে সেগুলি জলের সংস্পর্শে এসে মরিচা পড়ার ফলে কাজ করে না। আরো অনেক কিছু সমস্যা আছে সিস্টেমগুলিতে। তাই আমি এমন একটি সিস্টেম আবিষ্কার করেছি যেটি এই সব সমস্যার সমাধান করে দিতে পারে।
কিভাবে সিস্টেমটি কাজ করবে?
এই সিস্টেমের দুটি অংশ একটা হচ্ছে ট্রান্সমিটার (Transmitter ) আরেকটা হচ্ছে রিসিভার (Receiver )। আমাদের বাড়ির যেখানে আমার ওয়াটার পাম্প টি আছে সেখানে একটা রিসিভার থাকবে আর যেখানে জলের ওয়াটার ট্যাংক (Water tank) অবস্থিত সেখানে ট্রান্সমিটার থাকবে।
ব্যাপারটি ঘটবে ঠিক এমন, যখন ট্যাংকের জল ফুল হয়ে যাবে ট্যাংকির সঙ্গে লেগে থাকা ট্রান্সমিটার একটি সিগনাল ওয়ারলেস (Wireless ) ভাবে মোটর কে পাঠাবে। মোটরটি অফ হয়ে যাবে। এরপর যতক্ষণ না ট্যাংকের জল শূণ্য হচ্ছে মোটরটি আর অন হবে না | যখনই ট্যাংকের জল শূণ্য হয়ে যাবে তখন মোটরটি আবার পুনরায় অন হয়ে যাবে। ওয়ারলেস (Wireless ) ভাবে ঘটবে যার ফলে কোনো এক্সট্রা তার লাগবে না।
বাড়ির ছাদে থাকা ট্যাংকিতে যে সিস্টেমটি লাগানো থাকবে সেটা কে পাওয়ার (Power) দেওয়ার জন্য আমি একটা ছোট্ট 12 ভোল্টের সোলার প্যানেল (Solar Panel ) লাগানো থাকবে সেই খান থেকে মেশিনটি কাজ করবে। এর ফলে যখনই আমাদের বাড়ির ট্যাঙ্কি ফুল হয়ে যাবে,তখনই মোটরটি অফ হয়ে যাবে | যার ফলে জল অপচয় কমবে এবং বিদ্যুৎ অপচয়ও কমবে।
মৃন্ময় কাঞ্জিলাল গুসকরার গোবিন্দপুর শেফালী মেমোরিয়াল পলিটেকনিক (Gobindapur Sephali Memorial Polytechnic ) কলেজের ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (Electrical Engineering ) বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তার পড়াশোনা কে কাজে লাগিয়ে এই মেশিনটি বানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন যদি এই সিস্টেমটি প্রোডাকশন করা যায় তাহলে আমরা প্রত্যেকের বাড়িতে এটা ব্যবহার করতে পারব এবং বিদ্যুৎ ও জলের সমস্যা থেকে আমরা অনেকটা উদ্ধার হব।
স্মার্ট আপডেট 24 থেকে মৃন্ময় কাঞ্জিলাল কে এমন একটি যুগান্তর মেশিন আবিষ্কার করার জন্য অভিনন্দন আশা রাখব উনার ভবিষ্যৎ জীবনে তিনি আরো নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কার করবেন।