ভিক্টরিয়া মেমোরিয়াল এক ঐতিহাসিক স্তম্ভ, পড়ুন বিস্তারিত,(Victoria Memorial is a historical monument)
ভিক্টরিয়া মেমোরিয়াল হল কলকাতার একটি অন্যতম প্রধান টুরিস্ট আকর্ষণ। পৃথিবীর নানা দেশ থেকে বহু পর্যটক কলকাতায় আসে ভিক্টরিয়া মেমোরিয়াল দর্শন করার জন্যে। ভিক্টরিয়া মেমোরিয়াল পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত। পার্কস্ট্রীট, ময়দান অঞ্চল থেকে ভিক্টোরিয়া খুবই কাছে।
এই সৌধটি কলকাতা শহরের উপকন্ঠে অবস্থিত হওয়ায় কলকাতার যে কোনো প্রান্ত থেকে খুব অল্প সময়েই এই স্থানে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা ও শহর থেকে প্রচুর মানুষ সারাবছর এখানে ভীড় করে। ভিক্টরিয়া মেমোরিয়ালের পরিধিতে ঢোকার জন্যে একটি ১০টাকা মূল্যের টিকিট কাটার ব্যবস্থা আছে। তবে যারা এখানে প্রাতঃরাশ করেন তাদের ক্ষেত্রে টিকিটের ব্যবস্থা অন্যরকম।
ভিক্টরিয়া মেমোরিয়ালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস:
ভিক্টরিয়া মেমোরিয়াল হল ১৯০৬ খ্রীষ্টাব্দে নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং দীর্ঘ ১৫ বছর পর ১৯২১ সালে এই নির্মাণ কার্য্য সম্পূর্ণ হয়। রাণী ভিক্টোরিয়ার মৃত্যুর পর তত্কালীন ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড কার্জন রাণীর স্মৃতি রক্ষার্থে স্মারক প্রাসাদ ও উদ্যান- “ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল” এর নির্মাণ পরিকল্পনা করেন। সেই থেকেই এই সৌধটির নাম হয় ভিক্টোরিয়া হাউজ। বর্তমানে এই মিউজিয়াম এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
কলকাতার ভিক্টরিয়া মেমোরিয়াল ইটালিয় ভাস্কর্য নির্মাণ শৈলী দ্বারা অনুপ্রাণিত, এছাড়াও এখানে মুঘল রীতির গম্বুজ নকশার কাজ করা হয়েছে। ভিক্টরিয়ার ছবি দেখে অনেকে তাই তাজমহল ভেবে ভুল করে বসেন। তাজমহলের মত ভিক্টোরিয়াতেও সাদা মার্বেলের ব্যবহার হয়েছে। এই সৌধটির নকশা করেছিলেন ব্রিটিশ ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্ট স্যার উইলিয়াম এমারসন। বাগানের নকশা করেছিলেন লর্ড রেডেসডেল ও স্যার জন প্রেইন। নির্মাণকাজ করেছিল কলকাতার মার্টিন অ্যান্ড কোং।
কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
১) ভিক্টোরিয়া ভবন নির্মাণে রাজস্থানের মার্বেল ব্যবহার করা হয়েছিল । শুধু গ্রাউন্ড ফ্লোরের আয়তন ৭৭,০৬৪ বর্গফুট।
২) ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সহ মোট জমির পরিমাণ ৬৪ একর।
৩) কলকাতার এই জনপ্রিয় সৌধ নির্মাণে ব্যায় হয়েছিল ১ কোটি ৫ লাখ টাকা। নির্মাণ ব্যয় বহন করেছিল তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের অনুগ্রহভাজনরা। সরকারকে কোনো খরচ করতে হয়নি।
৪) ভিক্টরিয়া মেমোরিয়ালের মোট ওজন হিসেব করা হয়েছিল আশি হাজার তিনশত টন এবং ব্যবহৃত মার্বেলের মোট পরিমাপ ছিল প্রায় ৫০০ ঘন মিটার।
৫) ভিক্টরিয়া হাউজ তৈরীর সময় ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ট্রেন লাইন বসান হয়েছিল। মালপত্র আনা নেওয়ার সুবিধার্থে।
৬) ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে মোট ২৫টি গ্যালারি রয়েছে।
৭) এই সৌধের বাগানে রয়েছে সিংহাসনে বসা রাণী ভিক্টোরিয়া, রাজা সপ্তম এডয়োর্ড সহ ইংরেজ গর্ভনর জেনারেলদের ভাস্কর্য।
৮) সৌধের মাথায় ৩ টন ওজনের ১৬ ফুট উচ্চতার বিউগল- রাণী বিজয়দূতীর (Angel of Victory) ব্রোঞ্জমূর্তি, এককালে জোরে বাতাস বইলে শব্দ করতো, বর্তমানে এটি কাজ করে না।
৯) বিশেষ বিশেষ দিনে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে “লেজার শো” দেখান হয়। লেজারের আলোয় উঠে আসে অতীতের কলকাতার জীবন্ত ছবি। শহরের বিবর্তনের এই ধারাবিবরণী কলকাতার এক বিশেষ আকর্ষণ।
১০) ২৬ মে ২০১২ সালে কলকাতা সফরে এসেছিলেন সেই সময়কার আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল দেখে তিনি বিশিষ্ট অতিথিদের মন্তব্যের খাতায় লিখেছিলেন- “আমি অভিভূত”।