আজ বীরভূম জেলার ভোট। টিভির দৌলতে ঐ জেলার ছোট-বড় মাঝারি সব নেতার নাম শুনেছেন। কিন্তু যদি বলি ঐ জেলার এক মহিলা স্বাধীনতা সংগ্রামীর কথা, যিনি প্রথম অস্ত্র আইনে কারাদণ্ড ভোগ করেছিলেন ! জানেন নাকি নামটা ?
লালমাটির এই জেলায় বৃটিশদের বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহ ঘোষণা করেন দুই সাঁওতাল ভাই সিধু-কানহো। সেটা ১৮৫৫ সাল। সেই শুরু পরবর্তী সময়ে জেলার সর্বস্তরের মানুষই স্বাধীনতা আন্দোলনে নেমে পড়েন। বিপ্লবী আন্দোলনে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নামটি হল দুকড়িবালা দেবী। জন্ম ১৮৮৭ সালে এক গোঁড়া ব্রাহ্মণ পরিবারে। নীলমণি চট্টোপাধ্যায় ও কমলাকামিনী দেবীর কন্যা। অল্প বয়সেই বিয়ে হয় নলহাটির ঝাউপাড়া গ্রামের ফণীভূষণ চক্রবর্তীর সঙ্গে। সে কালের একেবারে মধ্যবিত্ত বাড়ির গৃহিণী ছিলেন তিনি।
বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় দেশ জুড়ে প্রতিবাদের যে ঢেউ ওঠে, তা স্পর্শ করে তাঁকেও। মনে মনে স্বদেশি মন্ত্রে দীক্ষিত হন তখনই। পরবর্তী সময়ে যোগাযোগ হয় তাঁরই এক আত্মীয়, বিপ্লবী নিবারণ ঘটকের সঙ্গে। সম্পর্কে নিবারণের মাসি ছিলেন দুকড়িবালা। সেই সূত্রেই ঝাউপাড়ার দুকড়িবালা দেবীর বাড়ি হয়ে ওঠে বিপ্লবীদের আখড়া। সেখানে তিনি ‘মাসিমা’ নামেই পরিচিত ছিলেন। বিপ্লবীদের কাছ থেকে শিখে নেন বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রচালনার কলাকৌশল।
এরমাঝে ঘটে যায় এক ভয়ঙ্কর কান্ড:
১৯১৪ সালের ২৬শে আগস্ট কলকাতার রডা কোম্পানির জন্য বিদেশ থেকে আসা ৫০টি জার্মান মাউসার পিস্তল এবং অজস্র কার্তুজের বাক্স কাস্টমস হাউস থেকে কোম্পানির গুদামে যাবার পথে হাপিস হয়ে যায়। অনুশীলন সমিতি ও যুগান্তর দলের বিপ্লবীদের এই ডাকাতির নেপথ্যে ছিলেন বিপিন বিহারী গাঙ্গুলী ও বাঘা যতীন। কলকাতা পুলিশের ঘুম উড়িয়ে দেয়া এই কান্ড অভিহিত হয় The Great Daylight Robbery নামে।
নিবারণ চন্দ্রের ওপর ভার ছিল ঐ পিস্তল ও কার্তুজ লুকিয়ে রাখার। সে কয়েকটি পিস্তল ও বেশকিছু কার্তুজ নিয়ে চলে আসে ঝাউপাড়া, মাসিমা সেগুলো লুকিয়ে রাখার দায়িত্ব নেন। দুদিন পর বিপ্লবী অনুকূল মুখার্জি আরো কয়েকটি মাউজার আনলে সেগুলিও তিনি লুকিয়ে রাখেন যদিও শেষরক্ষা হয়নি।
১৯১৭ সালের ১৭ই জানুয়ারি:
সার্চ ওয়ারেন্ট নিয়ে ভোররাতে দুকড়ি মাসিমার বাড়ি ঘিরে ফেলে পুলিশ। উদ্ধার হয় রডা কোম্পানির পিস্তল ও গুলি, গ্রেপ্তার হন দুকড়িবালা। আইন ভেঙে অস্ত্র রাখার অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। লকআপে তাঁর উপর নির্দয় ভাবে অত্যাচার করা হয় কিন্তু তিনি মুখ খোলেননি। বিচারে দু’বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয় তাঁর। তিনিই বাংলার প্রথম মহিলা বিপ্লবী, যিনি কারাগারে যান বেআইনি অস্ত্র রাখার অভিযোগে। ১৯১৮ সালের ডিসেম্বরে ছাড়া পান।