Smart Update24,By Syed Mosharaf Hossain
ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার ক্ষেত্রে আপনারা সবাই সেমিকন্ডাক্টর পড়ে থাকবেন ! আজ আমরা এই সেমিকন্ডাক্টার কে সরল ভাবে পড়বো:-
সেমিকন্ডাক্টর এই কথাটির অর্থ হচ্ছে এমন একটি ধাতু যেটা তে ইলেকট্রন পরিবহন করতে পারে আবার পারে না। কথাটা শুনতে অবাক লাগলেও এটা সত্য যে এমন কিছু সেমিকন্ডাক্টর মেটেরিয়াল আছে যেগুলিতে ইলেকট্রন পরিবহন করে আবার করেও না। ব্যাপারটা হচ্ছে ঠিক এমনই এমন কিছু ধাতু আছে যেগুলিতে বিদ্যুৎ পরিবহন করে সম্পূর্ণ হবে যেগুলিকে কন্টাকটার বলা হয়। অপরদিকে আবার কিছু বস্তু আছে যেগুলোতে তড়িৎ পরিবহন করে না একদম শূণ্য সেগুলিকে অপরিবাহী বলা হয়। এখন কথা হচ্ছে এই দুটি চরম সীমান্তে মাঝামাঝি যে অবস্থান সেটা হচ্ছে অর্ধপরিবাহী (সেমিকন্ডাক্টার)।
রোধ বা রেজিস্টেন্স এর দৃষ্টিভঙ্গীতেও সেমিকন্ডাক্টরের সংজ্ঞা দেয়া যায়। কন্ডাক্টরের রেজিস্টেন্স তুলনামূলকভাবে অনেক কম থাকে (কপারের রেজিস্টিভিটি ১০-৮Ω-m), আর নন-কন্ডাক্টরের রেজিস্টেন্স (মাইকার ১০১১Ω-m) থাকে অনেক বেশী। সেমিকন্ডাক্টরের রেজিস্টেন্স থাকে এদের মাঝামাঝি (সিলিকনের ১০-৪Ω-m)।
পরিবাহী বা কন্টাকটারের পারমাণবিক গঠন এমন হয় যে তাতে সামান্য চাপাচাপি করলে বা অল্প পটেনশিয়াল ডিফারেন্স এর ফলে তার মধ্যে বিদ্যুৎ পরিবহন করতে সক্ষম । অপরদিকে অর্ধপরিবাহী সেমিকন্ডাক্টর এর মধ্যে দিয়ে বিদ্যুৎ পরিবহনের করার জন্য পরিবেশ থেকে একটু সামান্য চাপাচাপি করতে হয়। আবার অপরিবাহী কে যত ইচ্ছে চাপাচাপি করল এমনকি ধমক দিলেও কোনো লাভ নেই কোনো মাত্র বিদ্যুৎ পরিবহন করে সম্ভব নয় এতে বাচ্চার কোন দোষ নেই সে যেটা পারেন না সেটা করতে পারবে না ।
সত্যি কথা বলতে কোন বস্তু ইচ্ছা করে সুপরিবাহী বা অপরিবাহী হয় না। তাদের এই বৈশিষ্ট্য আসলে তাদের পারমানবিক গঠনের ওপর নির্ভর করে। এটা ঠিক যে পারিপার্শ্বিক চাপ ও তাপমাত্রা কোন বস্তুর বিদ্যুৎ পরিবহনের ওপর প্রভাব ফেলে, তারপরও স্বাভাবিক তাপ ও চাপে বস্তুর আসল বৈশিষ্ট্যগুলোকেই পাওয়া যায়। যে গঠনগত পার্থক্যের কারনে প্রকৃতি বদলে যায়, তা লুকিয়ে আছে পদার্থের পরমানুর মধ্যে ইলেকট্রন-প্রোটনের বিন্যাসের মধ্যে।
বিদ্যুৎ পরিবাহক কিভাবে বিদ্যুৎ পরিবহন করে এই নিয়ে অনেক বিশদ ব্যাখ্যা আছে, তত্ত্ব আছে, আলোচনা আছে। আমরা যদি শুধুমাত্র ভালো পরিবাহকের পারমানবিক গঠনটুকুর দিকে চোখ রাখি, তাহলে দেখবো যে তাদের ইলেকট্রন বিন্যাসের কারনেই সর্ববহিঃস্থ স্তরের কয়েকটি ইলেকট্রনের উপর নিউক্লিয়াসের আসক্তি কম। ঢিলেঢালাভাবে লেগে থাকা এই ইলেকট্রনগুলো সামান্য উস্কানীতেই অন্য পরমানুর সাথে বন্ধন তৈরীতে বা বিদ্যুৎ প্রবাহে ব্যবহৃত হয়। আসুন দেখা যাক খুব পরিচিত তড়িৎ পরিবাহী কপারের একটি পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাস।
কপারের পারমানবিক সংখ্যা ২৯। এই ২৯টি ইলেকট্রন ধারন করার জন্য দরকার পরে তিনটি কক্ষপথের। পলি’র এক্সক্লুশান/বর্জন নীতি বলে প্রথম কক্ষপথে ২টি, ২য় কক্ষপথে ৮টি এবং ৩য় কক্ষপথে ১৮টি ইলেকট্রনের জায়গা হবে। কপারের প্রথম ৩টি কক্ষপথে তাই ২৮টি ইলেকট্রনের সংস্থান হয়। অবশিষ্ট ১টি ইলেকট্রন তাই থাকবে ৪র্থ বা একেবারের বাইরের কক্ষপথে। ৪র্থ কক্ষপথের ইলেকট্রন ধারনক্ষমতা ৩২টি। ক্ষুধা যেখানে ৩২টির কপারের সেখানে আছে ১টি। এই ১টির প্রতি তাই কপার পরমাণুর নিউক্লিয়াসের মায়া-মমতা বেশ কম। মূলত একারনেই কপার খুব সহজে বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে। কারন বিদ্যুৎ প্রবাহের জন্য প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনের স্রোত তৈরীতে এই বহিঃস্থ স্তরের ইলেকট্রনগুলো অংশ নেয়। এই বৈশিষ্ট্য শুধু কপারের নয়, বরং কপারের মত ইলেকট্রনিক বিন্যাস যাদের (বহিঃস্থ কক্ষপথে ১/২/৩ টি ইলেকট্রন বা যাদের আমরা ধাতু বলে থাকি), তাদের ক্ষেত্রেও সত্য।
অপরিবাহী/নন-কন্ডাক্টর বা অধাতুর ক্ষেত্রে দৃশ্যপটটা উল্টো হয়। অধাতুর ইলেকট্রন বিন্যাস এমন থাকে যে পরমাণুগুলো তাদের সর্ববহিঃস্থ স্তরের ধারনক্ষমতা পূরণের খুব কাছাকাছি থাকে (১/২টি ইলেকট্রন কম থাকে)। ফলে তারা তাদের ইলেকট্রন ছেড়ে দেয়ার চেয়ে অন্য কারো কাছ থেকে পাওয়ার জন্য ভীষন উদগ্রীব হয়ে থাকে। যার ফলাফল ইলেকট্রন প্রবাহ তৈরী না হওয়া।
অপরদিকে আমরা যদি সিলিকন পরমাণুর দিকে নজর দেই, দেখবো যে সিলিকনের পারমাণবিক সংখ্যা ১৪। এর বাইরের স্তরে ৮টি ইলেকট্রনের ধারনক্ষমতার প্রেক্ষিতে সিলিকনের আছে ৪টি। যেসব পদার্থের বাইরের কক্ষপথে ১/২টি ইলেকট্রন থাকে তাদের মত সিলিকন সহজেই তার বহিঃস্থ স্তরের ইলেকট্রনগুলো সহজে ছেড়ে দিতে পারেনা। আবার অধাতুদের মত একটি ইলেকট্রনও তো ছাড়বোই না, বরং আমাকে আরো ইলেকট্রন দিতেই হবে এমন গোঁ ধরেও থাকতে পারে না। সিলিকনের এই আচরন তাই ধাতু (তড়িৎ পরিবাহী) ও অধাতুর (তড়িৎ অপরিবাহী) মাঝামাঝি। কন্ডাক্টরের তুলনায় কিছুটা বেশী বল প্রয়োগ করে এই ইলেকট্রনগুলোকে তার অরবিট থেকে বের করে এনে তড়িৎ প্রবাহের সৃষ্টি করা যায়।
কন্ডাকটরের উদাহরন: তামা, লোহা, রূপা, অ্যালুমিনিয়াম ইত্যাদি
নন-কন্ডাক্টরের উদাহরন: অক্সিজেন, সালফার, ক্লোরিন, ইত্যাদি
সেমিকন্ডাক্টরের উদাহরন: সিলিকন, জার্মেনিয়াম, গ্যালিয়াম, আর্সেনাইড, ইনডিয়াম, ইত্যাদি।
তথ্য সংগ্রহ:- www.bigganbangla.com