Smart Update24, By Syed Mosharaf Hossain
বছর বারোর সায়ন্তন ভারী ডানপিটে। ছিপছিপে গড়ন, ফর্সা, বয়স অনুসারে বোধহয় কিছু বেশিই লম্বা। চেহারায় নিপাট ভালমানুষের মতো দেখতে হলে কী হবে, নানা কিম্ভুত কাণ্ড বাঁধাতে শ্রীমানের জুড়ি নেই। সায়ন্তনের কীর্তি–কলাপের কথা লিখলে হয়ে যাবে বেশ মোটাসোটা একটা বই ! আপাতত বই–টই লেখার বাসনা নেই, তাই সহজ বিকল্প হিসেবে আজ সকালের ঘটনাটাই বলি বরং।
রোববার হওয়ায় সায়ন্তনের বাবা খুব খেলিয়ে বাজার করেছেন আজ। বিস্তর জিনিসপত্র সমভিব্যাহারে বাড়ি ফেরার পর চেনা রিকশওলা সবুজই ব্যাগপত্র বয়ে এনে ঘরে রাখল। পরিশ্রান্ত, ঘর্মাক্ত চালককে দেখে শ্রাবন্তীর মায়া হল। চা খেয়ে যেতে বলায় ফ্যানের নীচে সবুজ বসল একটু জিরিয়ে নিতে।
অনেক দিনের রিকশা চালানোর ইচ্ছেপূরণের এই সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করার বান্দা নয় সায়ন্তন। কিন্তু রিকশা চালানো যে এত গোলমেলে ব্যাপার, সেটা কে জানত ! সিটে চেপে লম্বা ঠ্যাং দিয়ে প্যাডেল ঘোরাতেই বিপত্তি ! সোজা যাওয়ার বদলে রিকশাটা সহসা বাঁদিকে বাঁক নিয়ে গড়াতে শুরু করল। অবস্থা যা দাঁড়াচ্ছিল তাতে আনাড়ি চালক সমেত যানটার বাঁহাতি ড্রেনে আছড়ে পড়ার কথা। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় অন্য একজন রিকশচালক বোধহয় আঁচ করতে পেরেছিল কী সাংঘাতিক কাণ্ড ঘটতে চলেছে। তার হস্তক্ষেপেই মানুষ ও যান দুই–ই রক্ষা পেল এযাত্রায় !
পরবর্তী ঘটনাক্রমের বিশদ বিবরণ নিষ্প্রয়োজন। আমরা সেটা আন্দাজ করতেই পারি। কিন্তু রিকশার দুর্ব্যবহারের কারণ আমাদের পক্ষে অনুমান করা মোটেই সহজ কর্ম নয়। অপিচ, যন্ত্রবিদ্ প্রকৌশলী (Mechanical engineer) ত্রিচক্রযানের এবম্বিধ আচরণের যে ব্যাখ্যান দেবেন সেটা রীতিমতো কৌতূহলপ্রদ ও আশ্চর্যজনক ঠেকবে আমজনতার কাছে।
প্রকৌশলীর বক্তব্যের সারকথা হতে পারে এইরকম : চালকের পেশিশক্তিই যে রিকশা চালায় সেটা আঁচ করা কঠিন নয়। প্যাডেল ঘোরালে দাঁতওলা চাকার (sprocket) আবর্তনের দরুন চেনের মাধ্যমে ঘূর্ণন পেছনের চাকার অক্ষদণ্ডের ওপরে সাঁটা দাঁতওলা চাকাতেও সঞ্চারিত হয়। অক্ষদণ্ড ঘুরলে পেছনের চাকা ঘুরবে এবং যানটি চলতে শুরু করবে।
এই পর্যন্ত সিধে রাস্তায় চললেও গল্পে এবার আসবে একটা দারুণ বাঁক। অনেকটা সার্থক ছোটো গল্পের সমাপ্তি–চমকের মতন। জেনে অবাক হবেন, অক্ষদণ্ডের সাথে সাঁটা (fixed) থাকে কেবল পেছনের ডান চাকাটাই, বাম চাকাটা থাকে বিলকুল মুক্ত (free)। সোজা কথায়, প্যাডেল ঘোরালে কেবলমাত্র পেছনের ডান চাকাটাই আবর্তিত হয়ে রিকশাকে এগিয়ে নিয়ে চলে আর বাঁম চাকাটা ভার বইলেও চালনের (traction) ব্যাপারে লাগে না কোনো কম্মেই । তাই আনাড়ি হাতে রিকশা ‘টাল খায়’ (মানে, বাঁক নিতে চায়) বাঁদিকে, যেহেতু চালন বল অপ্রতিসম (asymmetrical)। অভিজ্ঞ রিকশাচালক হ্যান্ডেল নিয়ন্ত্রণ করে এই টাল সামলায়।
এবার সেই লাখ টাকার প্রশ্ন ! পেছনের বাম চাকার প্রতি কেন এই বৈষম্যমূলক আচরণ ? এবার জেনে নিন এর কারণ। আসলে দুটো চাকাই পেছনের অক্ষদণ্ডের সাথে সেঁটে দিলে গোল বাঁধত প্রতিবার রিকশা বাঁক নেবার সময়। কেননা ভিন্ন বৃত্তাকার পথে চলার কারণে একটা চাকা চাইত ধীরে ঘুরতে। এর ফলে সেই চাকাটা ঘষটাতো এবং ঘর্ষণজনিত বাধার সৃষ্টি করত। চালকের ওপর পড়ত বাড়তি চাপ। টায়ারের ক্ষয়ও হত দ্রুতহারে। আচমকা বাঁক নেওয়ার সময় রিকশা কাত হয়ে বিপর্যয় ঘটারও থাকত আশঙ্কা।
সুপ্রিয় পড়ুয়া, রিকশার পেছনের চাকায় যে এত গল্প লুকিয়ে আছে, তা কী আপনার জানা ছিল ?