ঝিঁঝিঁ পোকা আমরা সকলেই চিনি। চৈত্র বৈশাখ মাসে সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে চারদিক থেকে অসংখ্য পোকা ঝিঁঝিঁ করে ডাকতে থাকে। এটার ইংলিশ নাম হলো Cicada বা শিকাডা। এদের জীবনচক্রের সবচেয়ে মজার দিকটি হলো আমারা এই পাখাযুক্ত পোকাকে চারিদিকে উড়ে বেড়াতে দেখলেও আসলে এরা এদের জীবনের ১৭টা বছরই মাটির নিচে কাটিয়ে আসে। এদের জীবনচক্রটা বুঝলেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে।
প্রথমে মা শিকাডা ডিম পাড়ে গাছের ডালে। তারপর ডিম ফুটে যখন ক্ষুদ্র বাচ্চা বের হয়, তখন বাচ্চা মূল গাছ থেকে মাটিতে পড়ে যায়। যেখানে পড়ে সেখানেই গর্ত খুঁড়ে ঢুকে যায়। এরপর ঘাস বা মূল গাছের শিকড় থেকে প্রয়োজনীয় খাবার সংগ্রহ করে থাকে। একটানা সতেরাে বছর কেটে যায় এভাবেই। যদিও এই সাতের বছর তারা ঘুমিয়ে কাটায় বলে কুসংস্কার প্রচলিত আছে, কিন্তু ব্যাপারটা মোটেও তা নয়। ঠিক সতেরাে বছর হয়ে গেলে পোকার পুরো পপুলেশন মাটি ফেটে বেরিয়ে আসে আলাের পৃথিবীতে। তারপর তাদের এই বিশাল সৈন্য বাহিনী বড় গাছগুলো বেয়ে উপরে ওঠে যায়। এরপর এরা খোলস বদলায় আর তখই এদের পাখা গজায় এবং শরীরটা শক্ত হয়।
শুরু হয় দ্বিতীয় পর্যায়ের জীবন। দীর্ঘ সতেরাে বছর অন্ধকারে কাটিয়ে মুক্ত আলােয় এদের যে জীবন শুরু হয়, সে জীবন কিন্তু খুবই ছােট। মাটির নিচে থেকে ওঠে সত্যিকার জীবনে এরা বেঁচে থাকে মাত্র পাঁচ সপ্তাহ। এই পাঁচ সপ্তাহ প্রতিরাত্রে ঝিঝি স্বরে গান গেয়ে সঙ্গিনীকে ডেকে ফেরে। শিকাডদের মধ্যে শুধু পুরুষরাই ডাকতে পারে। মেয়েরা নির্বাক প্রাণী। মেয়ে শিকাড়ার সঙ্গে মিলিত হওয়ার পর ডিম ফুটে আবার বাচ্চা হয় শিকাদের। মাস পূর্ণ হলে মারা যায় বড় শিকাডারা। বাচ্চা ততোদিনে মাটির নিচে ব্যাস্ত। বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত প্রায় ৮০০ জাতের শিকাডা পােকার সন্ধান পেয়েছেন।