রহস্যেঘেরা প্রাচীন মায়া সভ্যতার কিছু চমকে দেওয়া তথ্য:-
Maya civilization: মায়া সভ্যতার পাথুরে লিপিতে প্রাপ্ত বর্ষপঞ্জীতে ছিল ২০১২ সালে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। কে মনে রেখেছে সে কথা? কিংবা পৃথিবীর ধ্বংস অনিবার্য, এ কথাটিই বা কে মনে রেখেছে? তবে মজার ব্যপার হচ্ছে হলিউডে এটি নিয়ে বিস্তর চলচ্চিত্রও কিন্তু বানানো হয়ে গিয়েছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে আমরা এখনো বেঁচে আছি। কিন্তু মজার ব্যপার হচ্ছে মায়ান সভ্যতার এই লিপির লেখকরা হাজার হাজার বছর আগে কেমন করে এই জিনিসগুলো নিজেদের মাথায় রেখে একেবারে নির্ভুলভাবে এত গণনা করে গিয়েছিল?
মায়া সভ্যতা (Maya civilization)গড়ে উঠেছিল বর্তমান যুগের মধ্য আমেরিকার এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে কেন্দ্র করে।
তাদের সভ্যতা টিকেছিল প্রায় ২০০০ বছর এবং ২০০ থেকে ৯০০ এডির(AD) মাঝে তারা উৎকর্ষতার চরম একটি পর্যায়ে পৌঁছতে সমর্থ হয়। তারা একটি জটিল গণিত ব্যবস্থা গড়ে তোলে ‘২০’ সংখ্যাটিকে কেন্দ্র করে। ‘০’ সংখ্যাটির ওপর তাদের নিজস্ব একটি প্রতীক ছিল এবং তাদের কৃষিব্যবস্থা ভিত্তিক। তাদের স্থাপত্য বিদ্যার ওপর বেশ ভালো দখল ছিল এবং লেখার জন্য নিজস্ব অক্ষর ছিল।
কিন্তু তারা ছিল আকাশ বিদ্যায় পারদর্শী। তারা বিশ্বাস করত যে প্রতিদিন যে আকাশে তারা ওঠে, চন্দ্র গ্রহণ হয়- এসব কিছুই তাদের জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা দিনলিপিতে এসব কিছু টুকে রাখত এবং তাদের প্রাত্যহিক ও ধর্মীয় জীবনে এদের ভূমিকা ছিল অন্যতম। তারা তাদের বইতে ঈশ্বর, তাদের জীবন ও আকাশে থাকা তারাদের নিয়ে নানা কথা লিখে গিয়েছে।
More: শ্রীকৃষ্ণের দারকা নগরী ধ্বংস ও সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়ার কারণ
এসব বইয়ের মাঝে সবচেয়ে বিখ্যাত হল “ড্রেসডেন কোডেক্স (Dresden Codex)” নামক বইটি। এটি জার্মানীর স্যাক্সন স্টেট লাইব্রেরীতে অবস্থিত। প্রায় ৩৯ পাতার এই বইটির প্রতিটি পাতার দু পাশেই রয়েছে নানা ধরণের তথ্য। এটা খুবই আশ্চর্যজনক একটি পুঁথি। জ্যোতির্বিজ্ঞানের নানা ধরণের তথ্য এর মাঝে রয়েছে।
কিন্তু বিজ্ঞানীদের যেটি চমকে দিয়েছে তা হচ্ছে, এই বইয়ের একটি পাতায় রয়েছে ‘ভেনাস’ নামক গ্রহটির কথা। এটিকে পৃথিবীর সবচাইতে কাছের গ্রহ বলা হয়েছে এবং এটির চলাচল নিয়ে নানা কথা বলা হয়েছে এই বইটিতে। ভেনাসকে এত গুরুত্ব দেবার কারণ হচ্ছে এটিকে মায়ানরা মনে করত পৃথিবীর ‘সিস্টার প্ল্যানেট’।
এটির আবর্তনের সাথে সাথে নিজদের অবস্থার পরিবর্তন হত বলে তারা মনে করত। ধর্মীয় ব্যপারে প্রচন্ড ভীরু ছিল তারা। তাই ভেনাসকে তারা একটু অনাবশ্যকভাবে বেশি গুরুত্ব দিত এবং এই গ্রহের গতিবিধি নিয়ে তাদের ছিল অসীম জানার আগ্রহ।
আমাদের যে চার বছর পর পর লিপ ইয়ার হয় তা তারা এই ভেনাস গ্রহের গতিবিধির মাঝেই দেখতে পেত। এটা নিয়ে তারা তাদের পুথির মাঝে নানা কথা লিখে গিয়েছে। এছাড়া তাদের আরো কয়েকটি বর্ষপঞ্জি রয়েছে যার মাঝে পৃথিবীর আসন্ন কিছু ঘটনার কথা বলা হয়েছে।
মায়ানরা এখনও পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যায়নি। ওদের পূর্বপুরুষদের স্থাপনাগুলো যেমন সগৌরবে এখনো দাড়িয়ে আছে পৃথিবীর বুকে, বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হয়ে, তেমনি এখনও মধ্য আমেরিকায় প্রায় ৬০-৭০ লাখ মায়ান বাস করছে নিজেদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বজায় রেখে।