HomeHistory of Inventionডিজেল ইঞ্জিনের আবিষ্কারক বিজ্ঞানী রুডলফ ডিজেল

ডিজেল ইঞ্জিনের আবিষ্কারক বিজ্ঞানী রুডলফ ডিজেল

WhatsApp Group Join Now
Instagram Profile Join Now
YouTube Channel Subscribe

Rudolf Diesel, the inventor of the diesel engine:contenteetimes images ednmoments diesel engine patent


সময়টা উনবিংশ শতকের শেষভাগ। জার্মানির বিখ্যাত প্রযুক্তিবিদ্যার বিশ্ববিদ্যালয় Royal Bavarian Polytechnic of Munich (বর্তমানে Technical Institute of Munich) এ তাপগতিবিদ্যার ক্লাস মনোযোগ সহকারে শুনছিলেন এক তরুণ। অধ্যাপক সেদিন পড়াচ্ছিলেন কার্নো ইঞ্জিন এবং ইন্টার্নাল কমবাশন ইঞ্জিন। ক্লাসের সমাপ্তি হলো এবং ক্লাস থেকে বেরিয়ে এল এক ঝাঁক তরুণ তরুণী, এদের মধ্যে ঐ তরুণও ছিলেন। মিউনিখের রাস্তায় তখন ঘোড়ায় টানা গাড়ির রমরমা, রাস্তার দিকে তাকিয়ে তরুণটির মনে হলো যদি এই ঘোড়ার গাড়ির বদলে মোটর চালিত গাড়ি রাস্তায় চলতো তাহলে কেমন হতো?hot bulb

কিন্তু মোটর চালিত গাড়ি বানানোর আগে তৈরি করতে হবে নতুন ধরনের ইন্টার্নাল কমবাশন ইঞ্জিন, যার নকশা বা উপযুক্ত জ্বালানি তখনও কেউ তৈরি করতে পারেনি। তরুণটি মনে মনে ঠিক করলেন যেমন করে হোক এরকম ইন্টার্নাল কমবাশন ইঞ্জিন তিনি তৈরি করবেন।

 

Group Cards
Google News View Now

এতক্ষন ধরে যে তরুণটির কথা বলা হল, তিনি হলেন বিখ্যাত বিজ্ঞানী এবং ডিজেল ইঞ্জিনের আবিষ্কারক রুডলফ ডিজেল।

জন্ম ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ১৮ মার্চ ফ্রান্সের প্যারিস শহরে। পরিবারের পারিবারিক পেশা ছিল বই বাঁধাই করা। ডিজেল ছোটবেলা থেকেই বই বাঁধাইয়ের কাজে নিজের পিতাকে সাহায্য করতেন। তাদের পারিবারিক আর্থিক অবস্থা স্বচ্ছল ছিল না। পিতার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে ডিজেল পারিবারিক ব্যবসার হাল ধরবেন। কিন্তু মেধাবী ডিজেল ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন বড় হয়ে তিনি প্রযুক্তিবিদ হবেন এবং নতুন নতুন যন্ত্রের উদ্ভাবন করবেন।


কৃতিত্বের সাথে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পর রুডলফ ডিজেল স্কলারশিপসহ ডাক পেলেন জার্মানির নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় Royal Bavarian Polytechnic of Munich এ।

তখন শুধুমাত্র অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছাত্রীরাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেতেন, তাই বাবা-মার মত না থাকা সত্ত্বেও কিছুটা জেদের বশে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হলেন রুডলফ। মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই ডিজেলের উদ্ভাবনী শক্তি আস্তে আস্তে ডানা মেলতে শুরু করল। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে পেয়েছিলেন Carl Von Linde কে, যিনি ছিলেন সেই শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রযুক্তিবিদ ও বিজ্ঞানী।

Rudolph Diesel and Thomas Edison exchange ideas


১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পর ডিজেল প্যারিসে চলে আসে এবং Carl Von Linde এর মডার্ন রেফ্রিজারেশন এন্ড আইসপ্লান্ট এ কাজ করা শুরু করেন।

প্যারিসের কাজ শেষের পর ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে তিনি বার্লিনে চলে আসেন এবং Linde এর কর্পোরেট রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্ট এর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। বার্লিনে থাকাকালীনই ডিজেল ইন্টার্নাল কমবাশন ইঞ্জিনকে শুধুমাত্র তাত্ত্বিক বইয়ের পাতা থেকে বের করে ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োগ করার ব্যাপারে সচেষ্ট হন।

আসলে এই সময় ইঞ্জিন বলতে মূলত দুই ধরনের ইঞ্জিনেরই ব্যবহারিক প্রয়োগ ছিল। প্রথম ধরনের ইঞ্জিন ছিল স্টিম ইঞ্জিন আর দ্বিতীয় ধরনের ইঞ্জিন হল ইন্টার্নাল কমবাশন ইঞ্জিনের বেসিক রূপ যা পেট্রোল বা গ্যাসে চলতে পারে। এই দুধরনের ইঞ্জিনের যে মূল সমস্যা ছিল সেটি হল উভয় প্রকার ইঞ্জিনের কর্মদক্ষতা ছিল মাত্র ১০ শতাংশ, যা ব্যবহারিক ক্ষেত্রে অত্যন্ত কম। বিজ্ঞানী ডিজেল ডিজাইন করতে চাইছিলেন এমন একটি ইন্টার্নাল কম্বাশান ইঞ্জিন যার কর্মদক্ষতা হবে বাকি দুই প্রকার ইঞ্জিন এর তুলনায় অনেকটাই বেশি।

১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় ডিজেল কর্তৃক রচিত Theory and construction of a rational heat engine to replace the steam engine and the combustion engine known today। মূলত এই বইয়ের প্রদত্ত তত্ত্বের উপর ভিত্তি করেই ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে ডিজেল মোটর ১৫০/৪০০ তৈরি করেন। যাকে বর্তমানে ডিজেল ইঞ্জিন নামে অভিহিত করা হয়।


ডিজেলের আবিষ্কার যুগান্তকারী হলেও সেই সময়ে তা কিন্তু ততটা জনপ্রিয় হয়নি। এর মুখ্য কারণ ছিল ডিজেল ইঞ্জিনের অত্যধিক দাম। কিন্তু দাম বেশি হলেও ডিজেল ইঞ্জিনের জ্বালানি খরচ ছিল অন্যান্য ইঞ্জিনে তুলনায় অনেকটাই কম। ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের সেনাবাহিনী প্রথম ডিজেল ইঞ্জিনকে নিজেদের সাবমেরিনে ব্যবহার করল এরপর থেকেই ডিজেল ইঞ্জিনের চাহিদা আস্তে আস্তে বাড়তে শুরু করে এবং বর্তমানে এই ইঞ্জিনের চাহিদা সর্বত্র।


এই বিখ্যাত বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদের মৃত্যু হয়েছিল অদ্ভুত রহস্যজনকভাবে। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দের ২৯শে সেপ্টেম্বর সন্ধ্যেবেলায় বেলজিয়াম থেকে লন্ডন যাওয়ার পথে SS Dresden নামক জাহাজ থেকে তিনি হঠাৎ নিরুদ্দেশ হয়ে যান। দশদিন বাদে নরওয়ের কাছে নর্থ সী-তে তার পচা গলা মৃতদেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ ও একদল রিপোর্টারের মতে ডিজেল নাকি আত্মহত্যা’ই করেছিলেন।

ডিজেল ইঞ্জিনের আবিষ্কারক হিসেবে রুডলফ ডিজেল পৃথিবীর আপামর জনসাধারণের জন্য শ্রদ্ধার আসনে আসীন থাকবেন। আজ এই মহান প্রযুক্তিবিদের জন্মদিনে ব্রেকথ্রু সায়েন্স সোসাইটির পক্ষ থেকে আমরা গভীর শ্রদ্ধা জানাই।


 

WhatsApp Group & Google News Flow
WhatsApp Group Join Now
Google News View Now
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular