সিলিং ফ্যানের বিভিন্ন অংশ এবং কার্যপ্রনালী Components And The Working mechanism of a ceiling fan)
Smart Update24,By Syed Mosharaf Hoosain:
সিলিং ফ্যান আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র। এটি ছাড়া আমাদের চলাই যেন দুষ্কর। বিশেষ করে গৃষ্ম কালের কথা যদি আমরা চিন্তা করি তাহলে সিলিং ফ্যান ছাড়া বাস-বাড়িতে বসবাস করা এক প্রকার অসম্ভব। আর সকলের পক্ষে নিশ্চই বাসা বাড়িতে এয়ার কন্ডিশন লাগানো সম্ভবও নয়। তাই সহজলভ্য এবং সহজ ব্যবহারযোগ্য যন্ত্র হিসেবে একমাত্র ভরসা এখন তাই এই সিলিং ফ্যান।
তাই আজ আমরা জানতে চলেছি আমাদের মাথার উপর ঘূর্ণায়মান এই সিলিং ফ্যান নামক যন্ত্রটি আসলে কিভাবে কাজ করে থেকে। এর কি কি অংশ বিদ্যমান। তাদের কাজগুলোই বা কি? কিন্তু তার আগে চলুন আমরা একটু সিলিং ফ্যান আবিষ্কারের ইতিহাসটা জেনে আসি। বলা বাহুল্য প্রথম আবিষ্কৃত সিলিং ফ্যান কিন্তু কোন বিদ্যুৎ শক্তি দ্বারা পরিচালিত হত না।
হ্যাঁ আপনারা ঠিকই শুনেছেন প্রথম আবিষ্কৃত সিলিং ফ্যান আসলেই বিদ্যুৎ দ্বারা চালিত হত না বরং এটি চলমান পানির প্রবাহের শক্তি দ্বারা পরিচালিত হত। এই সিলিং ফ্যান একটি ওয়াটার টার্বাইনের সাথে বেল্ট দ্বারা যুক্ত থাকতো এবং প্রবাহিত পানির চাপে যখন টার্বাইন ঘুরতো তখন উক্ত বেল্ট দ্বারা সিলিং ফ্যানটিও ঘুরতো। বর্তমান সময়ে আমরা যে ইলেকট্রিক্যাল সিলিং ফ্যান ব্যবহার করি তা ১৮৮২ সালে Philip Diehl নামক একজন বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেন।
সিলিং ফ্যান কিভাবে কাজ করে? (How does the ceilling fan work?)
সিলিং ফ্যানের সমস্ত পদ্ধতির মূল চালিকা শক্তি হলে ফ্যানের অভ্যন্তরে ব্যবহৃত মোটরটি। একে আমরা ফ্যানের আত্মার সাথেও তুলনা করতে পারি। এই মোটরটিই সরবরাকৃত বিদ্যুৎ শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তর করে যার ফলে ফ্যানটি ঘুরে আমাদেরকে বাতাস প্রদান করে থাকে। এই মোটরে একটি ক্যাপাসিটর, একটি ধাতুর বেজ এবং উক্ত বেজের উপর অসংখ্য কপার তার পেঁচানো থাকে।
যখন এই তার বা কয়েলের ভিতরে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় তখন সেখানে ইলেকট্রোম্যাগনেট বা বৈদ্যুতিক চুম্বকীয় আবেশ বা বল সৃষ্টি হয় যার ফলে উক্ত সকল যন্ত্রপাতি ঘড়ির কাটার দিকে ঘোরে। যার ফলে ফ্যানের বডি ও সংযুক্ত পাখা সহ সকল অংশ ঘুরতে থাকে এবং ফলশ্রুতিতে আমরা বাতাস সরবরাহ পেয়ে থাকি। আর এটাই মূলত সিলিং ফ্যানের বেসিক কার্যপ্রণালী।
যাইহোক বৈদ্যুতিক মোটর বলা হলেও একটি সিলিং ফ্যানে বৈদ্যুতিক মোটরের গঠন এবং উপাদানের থেকে কিছুটা ভিন্নতা আছে। আমরা সেগুলো নিচে পয়েন্ট আকারে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
মোটর (The motor):- এটি সম্পর্কে আমরা পূর্বেই পরিচিত হয়েছি। নতুন করে বলার কিছু নেই। একজন মানুষের যেমন জীবিত থাকতে আত্মার প্রয়োজন তেমনি ইলেকট্রিক সিলিং ফ্যানকেও চলতে গেলে এই মোটরের প্রয়োজন। তাই এই মোটরকে সিলিং ফ্যানের আত্মার সাথে তুলনা করলে ভূল হবে না।
ফ্যানের পাখা সমূহ (The Fan Blades):- এটি দেখতে লম্বা পাখার ন্যায়। এই পাখাগুলোর ঘূর্ণনের ফলেই বাতাসের প্রবাহ সৃষ্টি হয়। ফ্যানের পাখাগুলো সাধারণত নানান ধরণের উপাদান দ্বারাই তৈরি হয়। যেমন, কাঠ, প্লাষ্টিক, মেটাল ইত্যাদি। আর হ্যাঁ এই পাখাগুলো একেবারে সমান্তরাল থাকে না। একদিকে একটু বাঁকানো থাকে। যার ফলে এই ব্লেড বা পাখাগুলো খুব সহজেই উপর দিক থেকে বাতাস টেনে এনে নিচের দিকে সাপ্লাই দিতে পারে। সমান্তরাল হলে কখনই সঠিকভাবে বাতাস সাপ্লাই হবে না। ফ্যানের আকার আকৃতি অনুযায়ী পাকার সংখ্যাও কম বেশি হতে পারে তবে আমরা যেগুলো ব্যবহার করি তার বেশিরভাগই তিনটি অথবা চারটি পাখা বিশিষ্ট হয়ে থাকে। এই পাখাকে আবার বডির সাথে সংযোগ করার জন্য একটি ব্রাকেট বা বন্ধনী যুক্ত ছোট অংশকে ব্যবহার করা হয় যা মূলত পাখার সাথে রিভেট অথবা ছোট নাট বোল্ট দ্বারা আটাকানো থাকে।
ফ্লাইহুইল (Flywheel):– এটি একটি প্লাষ্টিক বা রাবারের তৈরি বস্তু যা মোটর বডির সাথে সংযুক্ত থাকে। এটি মূলত ফ্যান ব্লেড আয়রণ বা মোটরের ব্রাকেট অংশের সাথে সংযুক্ত থাকে। ফ্লাইহুইল এর ইনার রিং কে মোটর শ্যাফটের সাথে লক স্ক্রু দ্বারা আটকানো হয়। এবং বাহিরের রিং অংশে পাখাগুলোকে স্ক্রু দ্বারা আটকানো হয়ে থাকে। এই ফ্লাইহুইল অংশকে এমভাবে দুইটি ভাগে বিভক্ত করার ব্যবস্থা থাকে যাতে করে ফ্যানটি কিংবা ফ্যানের অভ্যন্তরভাগের মোটরটি কোন কারণে রিপিয়ার করার প্রয়োজন হলে যাতে তা সহজেই খুলে আলাদা করা যায়। হয়তো আপনারা ফ্লাইহুইল শুনে ঘাবড়ে গেছেন। আসলে ফ্যানের মোটর কয়েল অংশ এবং পাখা বাদে বাকি ঘূর্ণায়মান অংশটিই হল ফ্লাইহুইল। এর ফ্লাইহুইল এর কাজ হল গতি জড়তা সৃষ্টি করা। অর্থাৎ তাকে একবার ঘুরালে যেন নিজে থেকেই গতি জড়তার কারণে কোন বিদ্যুৎ সাপ্লাই ছাড়াও কয়েকবার ঘুরতে পারে। যেমন হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে কিংবা ফ্যান বন্ধ করা হলে তা সাথে সাথে থেমে না গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ ঘুরতে থাকে। একেই বলে গতি জড়তা যা উক্ত ফ্লাইহুইলের কারণেই হয়ে থাকে।
জে হুক এবং ইউ বোল্ট (J Hook & U Bolt):- জে হুক অনেকের কাছে ক্রো হুক নামেও পরিচিত যা মূলত সিলিং এর মধ্যে বসানো হয়ে থাকে। এর সাথে একটি রাবারের অংশ ব্যবহার করা হয়ে থাকে যা মূলত সিলিং ফ্যানের ঘূর্ণনজনিত ভাইব্রেশনকে কমাতে সহায়তা করে, তাছাড়া ফ্যানের সঠিক ব্যালেন্স বজায় রাখতেও এটি সহায়তা করে। ইউ বোল্টও জে হুকের মতেই তবে এটি দেখতে ইংরেজী U আকৃতির যার দুই প্রান্ত সিলিং এর দুই জায়গায় আটকানো থাকে। ইউ বোল্টের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এটি ফ্যনের ঝাকুনিতে খুলে পড়ার কোন ভয় থাকে না। কিন্তু জে হুক খুলে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। আর চলমান অবস্থায় যদি সিলিং ফ্যানটি কোন কারণে খুলে আপনার মাথার উপরে কিংবা শরীরে আঘাত করে তাহলে কি হতে পারে সেটা নিশ্চই আপনি নিজেই অনুমান করতে পারছেন। সুতরাং বাসা বাড়িতে সিলিং ফ্যান লাগানোর সময় অবশ্যই সতর্কতার সহিত এবং সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নাহলে কিন্ত মেডিকেলে যেতে হবে নিশ্চিত। বলা যায়না হয়তো তেমন গুরুতর আঘাতে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটতে পারে। সুতরাং Safety First.
এই ছিলো মোটামুটি ধারণা। পরিশেষে একটি কথা, সিলিং ফ্যান কিন্তু কখনই রুমকে ঠান্ডা করতে পারে না। এটি শুধুমাত্র হাইড্রোলিক্স এর নীতি অনুসারে নির্দিষ্ট স্থানে বাতাসের সরবরাহ বৃদ্ধি করে বা বাতাসের চাপকে বৃদ্ধি করে থাকে। যদি উক্ত স্থানে গরম বাতাস থাকে অর্থাৎ বাতাসের তাপমাত্রা বশি থাকে তাহলে সিলিং ফ্যান উক্ত তাপযুক্ত বাতাশকেই সাপ্লাই দিবে। উধাহণস্বরূপ আপনারা দেখেছেন গরমের সময় টিনের ঘরে সিলিং ফ্যান চালালে ঠান্ডা হয় না বরং উপর থেকে তাপযু্ক্ত বাতাস সরবরাহ করে।