ভারতের ‘প্লাস্টিক ম্যান’ রাজাগোপালন বাসুদেবন আবিষ্কার করেন প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে কীভাবে সড়ক পথ নির্মাণ করা যায়। (India’s ‘Plastic Man’ Rajagopalan Basudevan discovers how to build roads from plastic waste)
Smart Update24,By Syed Mosharaf Hossain: পরিবেশ-বিজ্ঞানীদের মতে বর্তমানে সমুদ্রের প্রতি বর্গ মাইল, প্রায় ৪৬,০০০ ভাসমান প্লাস্টিকের টুকরো বহন করে। দ্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম মনে করছে বর্তমান এই অবস্থার পরিবর্তন না ঘটলে ২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্রে মাছের থেকে প্লাস্টিকের সংখ্যা বেশি হয়ে দাঁড়াবে; এই প্লাস্টিক দূষণের প্রায় ৬০% অবদান আমাদের দেশ ভারতেরই। প্রতিবছর ভারত প্রায় ৫৬,০০,০০০ প্লাস্টিক বর্জন করে। NGT (National Green Tribunal)-এর নির্দেশ অনুযায়ী ২০১৭ সালের ১লা জানুয়ারি পরিবেশ দূষণের কথা মাথায় রেখে ডিসপোজাল প্লাস্টিক গ্লাসের ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু সে নিয়ম লেখা থাকে কেবল খাতার পাতাতেই।
তামিলনাড়ুর মাদুরাই শহরের অধ্যাপক রাজাগোপালান বাসুদেভান এক অবিশ্বাস্য বিকল্প পদ্ধতি আমাদের সামনে আনেন। তিনিই প্রথম আবিষ্কার করেন ব্যবহৃত প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে কীভাবে সড়ক পথ নির্মাণ করা যায়। তাঁর মতে “প্লাস্টিক ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর জীবনধারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আবার প্লাস্টিক পোড়ালে বা মাটি চাপা দিলে পরিবেশও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে”। সুতরাং একটি বিকল্প পদ্ধতির কথা অনেকদিন ধরেই তাঁকে ভাবাচ্ছিল।
কিন্তু কে এই প্লাস্টিক ম্যান? ১৯৬৭ সালে মাদ্রাজ ইউনিভার্সিটি থেকে MSc পাস করে, সেখানেই ১৯৭৪ সালে তিনি তাঁর পিএইচডি সম্পন্ন করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট। বর্তমানে তিনি তামিলনাড়ুর থিয়াগ রাজরান কলেজে ইঞ্জিনিয়ারিং-এর অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
২০০১ সাল থেকেই প্লাস্টিক বর্জ্যের বিকল্প ভাবনা তাঁকে ভাবায়। এ বিষয়ে দীর্ঘ সময় ধরে গবেষণা করেন তিনি। তার ফলবশত প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে সড়ক নির্মাণ পদ্ধতিটির ভাবনাই তাড়িত করে তাঁকে। সর্বপ্রথম তাঁর নিজের কলেজেই এই ভাবনার কথা জানালেও সেই সময় তেমন সাড়া মেলে না। পরবর্তীকালে ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ড. এ.পি.জে. আবদুল কালাম কলেজ পরিদর্শনের সময় এ বিষয়ে জানতে পারেন এবং বিশেষভাবে আগ্রহ প্রকাশ করে রাজাগোপালান বাসুদেভানকে কলেজ ক্যাম্পাসের মধ্যেই এই পদ্ধতি ব্যবহার করে ধূসর রঙের রাস্তা নির্মাণ করতে উৎসাহিত করেন।
২০২০ সালে, এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তিনি ৬০ ফিট দীর্ঘ রাস্তা নির্মাণ করেন যা আজও অক্ষত আছে। বিটুমিন নামক এক প্রকার হাইড্রোকার্বন আর নুড়ি পাথরের মিশ্রণ এই রাস্তা তৈরির উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়। গবেষণা করে দেখা গেছে এই উপাদানসমূহের সঙ্গে গলিত প্লাস্টিক মেশালে তা অনেক বেশি উন্নত হয়। বিটুমিন-মডিফাইড প্লাস্টিক ব্যবহারের ফলে সড়কের ঘাত বহন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং তা দীর্ঘস্থায়ী হয়।
এটা প্রমাণিত যে এই পদ্ধতিতে একাধারে যেমন সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে সময় অনেক কম লাগবে তেমনই অপরদিকে প্লাস্টিক দূষণের মতো ভয়ংকর অভিশাপের হাত থেকে মুক্তি পাবে পরিবেশও। এখনও পর্যন্ত ভারতের প্রায় ১০,০০০ কিলোমিটার সড়ক এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্মিত হয়েছে।