HomeBlogCC : এই শব্দ টা আমরা সবাই শুনেছি আজ আমরা জানবো ...

CC : এই শব্দ টা আমরা সবাই শুনেছি আজ আমরা জানবো ইঞ্জিনের সিসি জিনিসটা কি ?

CC/সিসি এই কথাটি আমরা প্রায়ই শুনে থাকি মোটরযানের ক্ষেত্রে।আমার বাইকটি এত CC , তোর বাইকটি কত সিসি ?এই বাইকটা এত সিসি ভাই কিনলে খুব ভালো হয়। সিসি সিসি সিসি কিন্তু সিসিটা কি? অনেকেই বাইক কেনার সময় সিসিটা আগে দেখেন তারপর বাইকটা কেনেন । অনেকেই সিসিটা মানে জানেন না,  যার যত বেশি সিসি বাইক  তার তত ভালো বাইক সেই ভেবে বাইক কেনেন। যেমন কেউ জিজ্ঞেস করলো, ‘বাইকটা কত সিসির ভাই?’ ‘একশ চল্লিশ সিসির।’ সিসির হিসেব টা আদতে কি? এই CC সঙ্গে একটি মোটর বাইকের ইঞ্জিন এর কি সম্পর্ক জড়িত আছে তা নিয়ে আজকে আমাদের মূল কথা তাই পড়ুন বিস্তারিত।

সহজ কথা সিসি বা CC হচ্ছে Cubic Centimeters বা ঘণ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ কোনকিছুর মাঝে কোনো পদার্থের পরিমাণ এর আয়তন এর হিসেব। বা সহজ কথায় সেই পদার্থ দৈর্ঘ্য, প্রস্থ আর উচ্চতা মিলিয়ে কতটুকু জায়গা নিচ্ছে তার হিসেব। মোটর ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যদি বলি একটি ইঞ্জিনের যে সিলিন্ডার থাকে সবকটা সিলিন্ডার মিলে ওই ইঞ্জিন এর ভিতরে কত পরিমান ফুয়েল এর জায়গা দিতে পারা যাবে সেটাই হচ্ছে শিশির হিসেবে ।

আচ্ছা খুব কঠিন মনে হচ্ছে আসুন আরো সহজ করে দিচ্ছি ?

ধরুন একটা বাইক আছে যেটি 125 সিসির এবং সেই ইঞ্জিনটি হচ্ছে 4 স্ট্রোক ইঞ্জিন। তারমানে চারটি স্টকের চারটি সিলিন্ডার মিলে মোট 125 সিসি ফুয়েল টানতে পারে অর্থাৎ প্রতিটি সিলিন্ডারের ক্ষমতা হচ্ছে 30 CC ।অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভাষায় বলতে গেলে CC হচ্ছে ইঞ্জিনের সিলিন্ডারের প্রতিবারে ফুয়েল বা ইন্ধন শোষণ করার ক্ষমতা। এই শোষণ করার ক্ষমতা এবং তার ব্যবহার আবার ইঞ্জিনের সিলিন্ডার, এর গঠন, এর ভেতরে থাকা পিস্টন, পিস্টনের গঠন, আকার, ওজন, সিলিন্ডারের কম্বাশ্চন রেট (Combustion rate) ইত্যাদির উপর নির্ভর করে। এই CC উপরে নির্ভর করে যে একটি ইঞ্জিন কত সিস, একটা চাকাকে ঘোরাতে কত পরিমান ফুয়েল কে কাজে লাগিয়ে শক্তি উৎপন্ন করবে।

সিসি কমবেশি হবার গুরুত্ব:-


একটি ইঞ্জিনের সিসি গুরুত্ব কতটা সেটা বুঝতে গেলে এটা বলা যেতে পারে যে কোন ইঞ্জিনে সিসি যদি বেশি থাকে তার মানে এটা নয় যে সে ইঞ্জিন এর ক্ষমতা খুব বেশি আবার কোনও ইঞ্জিন এর মাইলেজ নির্ভর করে তার ক্ষমতার উপর সেহেতু বেশি সিসি মানে অধিক মাইলেজ নয় ।সিসির গুরুত্বটা কি বা কোন দিক বিবেচনায় আপেক্ষিত বা ইঞ্জিন স্বাপেক্ষ তা বুঝার জন্যে আমাদের ইঞ্জিনের টুকিটাকি কিছু জিনিষ জানা জরুরী। এই CC ব্যাপারে ভালো করে বুঝতে গেলে আমাদেরকে ইঞ্জিন এর ভিতরে কি কি থাকে সেটা নিয়ে সামান্য জেনে নিতে হবে , চলুন তাহলে আলোচনা করি-


Cylinder Block হচ্ছে পিস্টনভিত্তীক ইঞ্জিনের হৃৎপিণ্ড। কারণ এর মাঝেই ইঞ্জিনের মূল কাজটা সংঘটিত হয়ে থাকে। এই সিলিন্ডার ব্লকে কয়েক ইঞ্চি ব্যাসের যে গোলগোল খোপগুলো থাকে তার মাঝেই হয় ইঞ্জিনের যত লীলাখেলা। আর এই খোপগুলোকেই বলা হয় ইঞ্জিনের সিলিন্ডার। এই সিলিন্ডারের ভেতরই থাকে পিস্টন। যার ওঠানামার মধ্য দিয়েই গাড়ি পায় তার গতি। প্রতিটা সিলিন্ডারে আমাদের হৃৎপিণ্ডের মতই Valve থাকে।

যার একটা ইনলেট (Inlet) ভালভ, যা উন্মুক্ত হলে গ্যাস বা পেট্রোল আর বাতাসের মিশ্র জ্বালানী এর মধ্য দিয়ে সিলিন্ডারে প্রবেশ করে। তখন পিস্টনটি সিলিন্ডারের নিচে নামে। একে ১ম স্ট্রোক বা Intake Stroke বলে। সিলিন্ডারে তখন যত ঘন সেন্টিমিটার জ্বালানী+বাতাস প্রবেশ করে, সেটাই তার CC। পিস্টন আবার উপরে উঠলে জ্বালানী কম্বাশ্চন চেম্বারে প্রচন্ড চাপে কমপ্রেস হয় বা সংকুচিত হয়।

একে ২য় বা কমপ্রেশন স্ট্রোক বলে। তখন সিলিন্ডার হেডের উপরে থাকা স্পার্ক প্লাগ স্পার্ক করলে বা স্ফুলিঙ্গ তৈরি করলে তাতে ভেতরে শুরু হয় বিস্ফোরণ। সেই বিস্ফোরণের চাপে পিস্টন নামে যাকে ৩য় বা পাওয়ার স্ট্রোক বলে। তখন অপর ভালভটি, যেটি Exhaust ভালভ,সেটি খুলে যায় এবং দহন হওয়া জ্বালানী Exhaust Outlet দিয়ে বাইরে বেরিয়ে পড়ে। যাকে ৪র্থ স্ট্রোক বা এক্সহস্ট স্ট্রোক বলে। উল্লেখ্য এই ভালভসমুহ ইঞ্জিনভেদে এক বা একাধিক হয়ে থাকে। এবং এদের ওঠানামা সংঘটিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় এক বা একাধিক ক্যামশ্যাফট দ্বারা যেগুলোকে Single Over Head Camshaft আর Double Over Head Camshaft বলে।

পিস্টনের নীচে থাকা কানেকশন রড দ্বারা এটি নীচের Crankshaft এর সাথে সংযুক্ত থাকে। ফলে পিস্টন ওঠানামা করলে ক্র‍্যাংকশ্যাফট ঘুরে এবং সেই ঘূর্ণনই কাজে লাগিয়ে গিয়ারের মাধ্যমে গাড়ির চাকা ঘুরে।


এখন কথা হল এইযে ইঞ্জিনে দহন হবার এই প্রক্রিয়া, তা ইঞ্জিনের প্রতি স্ট্রোকে জ্বালানী টেনে নেয়ার ক্ষমতা এবং একে সংকুচিত করার অনুপাতে বা Compression Ratioর উপর নির্ভর করে। কোনো ইঞ্জিন যদি জ্বালানী বেশি টেনে নেয় তাহলে তাতে বিস্ফোরণের ধাক্কাটাও তেমনি বেশি হবে। ফলে পিস্টনের ওঠানামাও বেশি হবে প্রতি সেকেন্ডে আর ক্র‍্যাংশ্যাফট এর ঘূর্ণনও প্রতি সেকেন্ডে তুলনামূলক বেশি হবে।

এবং চুড়ান্তভাবে ইঞ্জিনটার হর্সপাওয়ার বেশি হবে এবং গতিও হবে বেশি। আর জ্বালানীর ইনটেক রেট মানেই যেহেতু সিসির মাত্রা, তাই এক্ষেত্রে বেশি সিসি বেশি আউটপুট নির্দেশ করে৷ আর এজন্যেই ইঞ্জিনের বেলায় CC টা এত গুরুত্বপূর্ণ।

কিন্তু শুধু সিসি বেশি থাকলেই কিন্তু আউটপুট বেশি হয়ে গেল না। অধিক সিসিকে সর্বোচ্চ উৎপন্ন ক্ষমতায় কাজে লাগানোটা ইঞ্জিন পিস্টনের কমপ্রেশন রেশিওর উপরও নির্ভর করে। যেহেতু গোটা ইঞ্জিন চলে বা এত হর্সপাওয়ার নির্ভর করে এর অভ্যন্তরে হওয়া দহনের উপর, আর দহন থেকে উৎপন্ন শক্তি, ধাক্কার পরিমাণ যেহেতু নির্ভর করে জ্বালানীর মাত্রা আর এর সংকোচনের উপর তাই ইঞ্জিন আউটপুটের জন্যে ইঞ্জিনের সিসি আর কমপ্রেশন রেশিও, দুটোই গুরুত্বপূর্ণ।

জ্বালানীর মিশ্রণের সংকোচন বেশি হলে এর দহণশক্তিও বেশি হবে। দেখা গেল একটা রাবারের টিউবে আমরা বাতাস ভরছি। যত ভরছি ততই কিন্তু বাতাস ভেতরে সংকুচিত হচ্ছে। দেখা গেল স্বাভাবিক আয়তনের চাইতে দশভাগের একভাগ আয়তনে আমরা সেটাতে বাতাস ভরলাম। অর্থাৎ এমনিতে বাতাস টিউবটিতে যতখানি জায়গা দখল করবে, স্বভাবতই এক্ষেত্রে সে তার চাইতে দশভাগ কম জায়গায় দখল করছে। এক্ষেত্রে কমপ্রেশন রেশিও হয়ে দাঁড়াচ্ছে ১০ : ১।

ফলে অতিরিক্ত চাপে টিউব ফুটো করতে গেলে কিন্ত তা ফেটে প্রচন্ড বেগে এবং বিকট শব্দে বাতাস বের হবে। কিন্তু বাতাস চাপাচাপি করে না রাখলে তাতে ফুটো করলেও কোনো বিকট শব্দ হবেনা। না ই বা বাতাস টিউব ফেটে গিয়ে প্রচন্ড গতিতে ছিটকে বেরিয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে বাতাস স্রেফ ধীরভাবে ফুশ করে বেরিয়ে যাবে।
আর ঠিক তেমনি, ইঞ্জিনের বেলাতেও শুষে নেয়া জ্বালানীকে যতটা ভালভাবে কমপ্রেস করা হবে, দহনে তার ধাক্কাটাও তেমনি দুর্দান্ত বেশী থাকবে।

সুতরাং বুঝতেই পারছেন এক্ষেত্রে সিসির পাশাপাশি কমপ্রেশন রেটটাও কতটা জরুরী!

আর কমপ্রেশন হার, ইঞ্জিন ব্লকের গঠন, সিলিন্ডারের গঠন, পিস্টনের গঠন, বোর বা পিস্টনের ব্যাসের তারতম্য, ইত্যাদির জন্যে ফুয়েল কনসামশন / সিসি দুই ইঞ্জিনের এক সমান হলেও অনেক সময় এক ইঞ্জিন আরেক ইঞ্জিনের চাইতে আউটপুট / হর্সপাওয়ার বেশি দিয়ে থাকে। আর যার হর্সপাওয়ার বেশি, তার গতিও বেশি!

তথ্যসূত্রঃhttps://bigganbortika.org/

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular