বর্ধমানের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার সাবির হোসাইন
Stop Bleeding Powder: গভীর ক্ষত থেকে তীব্র রক্তক্ষরণে অনেক সময়ই প্রাণসংশয় দেখা দেয়। তাই সেই রক্ত দ্রুত বন্ধ করা জরুরি। কিন্তু কীভাবে? ক্ষতস্থানে অত্যন্ত তাড়াতাড়ি রক্ত বন্ধ করার জন্য বিশ্বে ছ’থেকে সাতটি ওষুধ আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সবচেয়ে দ্রুত যে ওষুধটি রক্ত বন্ধ করে, সেটিও কাজ শুরু করতে প্রায় দু’মিনিট সময় নেয়।
এদিকে এক বঙ্গসন্তান এমন একটি ওষুধ আবিষ্কার করেছেন, যা রক্ত বন্ধ হতে প্রায় ৩০ সেকেন্ড সময় নেয়। গুরুতর আহতকে বাঁচাতে এই ওষুধ প্রায় ম্যাজিকের মতো কাজ করে। আর তাতেই বহু মৃত্যুপথযাত্রীকে নতুন জীবন দেওয়া সম্ভব। বাঙালির এই আবিষ্কারকে শুধু কুর্নিশ করেই ক্ষান্ত হয়নি কেন্দ্রীয় সরকার। এই প্রকল্পটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে যে স্টার্ট আপ গড়ে তোলা হয়েছে, তাকে বিশ্বের দরবারে হাজির করছে ‘স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া’। যে ১০৪টি প্রকল্প ঠাঁই পেয়েছে ওই শোকেসে, তার মধ্যে অন্যতম বাংলার ‘স্টপ ব্লিড’।
বর্ধমানের বাসিন্দা পেশায় বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার সাবির হোসাইন রাউরকেলার এনআইটি’তে স্নাতকোত্তর পড়াশুনোর সময় একটি সলিউশন আবিষ্কার করেন (Stop Bleeding Powder), যা দ্রুত রক্ত বন্ধ হতে সক্ষম। তাঁকে সেই কাজে সাহায্য করেন তাঁরই শিক্ষক দেবেন্দ্র ভার্মা। তাঁরা ঠিক করেন, এই প্রকল্পকে তাঁরা বাণিজ্যিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
তাঁদের সেই উদ্যোগে যোগ দেন প্লাস্টিক সার্জেন মুবেন মিদ্দা। পথ চলা শুরু করে নতুন সংস্থা ‘মিরাকেলস’(Miracles)। কিন্তু সংস্থাটিকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য টাকার দরকার। প্রাথমিকভাবে সাবিরের বাবা কিছু টাকা দিলেও, সেই স্টার্ট আপকে স্বীকৃতি দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। তারা ৭০ লক্ষ টাকার মূলধন ঢালে ওই প্রকল্পে। আলাদা করে লগ্নি আসে আমেরিকা, সিঙ্গাপুর ও ইজরায়েল থেকে।
Read More : International Journal এ স্বীকৃতি পেল এক বাঙালির আবিস্কৃত মহিলা সুরক্ষাকারী জুতা| পড়ুন বিস্তারিত |
সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও কর্ণধার সাবির হোসাইনের কথায়, আমরা স্টপ ব্লিড নামে এমন একটি কম্পাউন্ড তৈরি করেছি, যেটি কোনও দুর্ঘটনায় অত্যন্ত কার্যকর। গভীর ক্ষতে দ্রুত রক্তক্ষরণেই প্রাণ যায় অনেকের। কেউ যদি আমাদের উপাদানটি গাড়ি বা বাইকে রাখেন, তাহলে দুর্ঘটনার প্রাথমিক ধাক্কা রুখে দেওয়া সম্ভব।
Powder to stop bleeding in 30 secs! DRDO honours Burdwan rice-mill owner’s son Sabir Hussain
সেনাবাহিনীতেও এটি অত্যন্ত কাযর্কর। এটি শুধু আমাদের মুখের কথা নয়। ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (DRDO) দেশের সশস্ত্র বাহিনীর জন্য সেরা ‘হিমোস্ট্যাটিক এজেন্ট’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ‘স্টপ ব্লিড’-কে।
১০ লক্ষ টাকার অনুদানও দিয়েছে তারা। ‘প্রারম্ভ’ নামে একটি উদ্যোগে কেন্দ্রীয় সরকার দেশের ২৫টি স্টার্ট আপকে তুলে ধরে। সেখানেও ঠাঁই হয় আমাদের সংস্থার। বর্তমানে ভুবনেশ্বরের একটি ল্যাবরেটরিতে তৈরি হচ্ছে রক্ত-রোখা এই কম্পাউন্ড। পাশাপাশি বেঙ্গালুরুর তিনটি, হায়দরাবাদের একটি ও দিল্লির দু’টি ল্যাবেও কাজ চলছে। স্টপ ব্লিডের দাম প্রতি গ্রাম ৫০০ থেকে ৭০০ টাকার কাছাকাছি। সংস্থার কর্তাদের দাবি, এই কম্পাউন্ডটির ওজন এতই হালকা, এক গ্রাম পাউডারে একটি কোল্ড ড্রিঙ্কের ছোট শিশির অর্ধেকটা ভরে যাবে।
যে স্টার্ট আপ সংস্থাগুলিকে কেন্দ্রীয় সরকার বিশ্বের দরবারে তুলে ধরছে, তার মধ্যে জায়গা করেছে ‘মিরাকেলস’-এর ‘স্টপ ব্লিড’। কিন্তু এখনই কোনও নামজাদা সংস্থার হাতে এর স্বত্ব তুলে দিতে চান না সংস্থার কর্তারা। তাঁদের কথায়, আমরা নিজেরাই এটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। সেই কারণেই স্টার্ট আপের সূচনা। আমাদের স্বপ্ন, এই ভারতীয় সংস্থাই একদিন বিশ্বের কাছে আলাদা মর্যাদা পাবে।