Abscess | শরীরে ফোঁড়া কেন হয় | ঘন ঘন ফোড়া হওয়ার কারণ ?
Contents
Abscess: এক ভদ্রলোক আমার পাশে বসে অনেকক্ষণ থেকে উশখুশ্ করছিলেন ট্রেনে।একবার এপাশ একবার ওপাশ একবার একটু উঠছেন,দাঁড়াচ্ছেন,আবার বসছেন,ইতিমধ্যে ব্যাপারটা আমি লক্ষ্য করলাম প্যান্টের পিছনে পাছার কাছটায় একটা গোল ভেজা দাগ।আমি তো বুঝে গেছি ব্যাপারটা,কিন্তু তোমরা যেটা ভাবছো সেটা নয়।
আমি একটু নীচু স্বরে জিজ্ঞাসা করলাম-“ফোঁড়াটা (Abscess) কি ফেটে গেছে দাদা?”
ভদ্রলোক কপালের ঘামটা রুমাল দিয়ে মুছে বললেন-“আপনি কি করে জানলেন?”
আমি বললাম-“আমি অনেক কিছুই লক্ষণটক্ষণ দেখে জানতে বুঝতে পারি,কিন্তু এ তো ভয়ানক ব্যথা হবে,আপনি দাঁড়িয়ে থাকুন।” সারা পথে ভদ্রলোক আর বসেননি।পাছে পাছার ব্যথা চাগিয়ে ওঠে।কিন্তু তোমরা এই যে হাসছো এটা শুনে,এখুনি তোমাদের বললে বুঝবে এই ফোঁড়া কি জিনিস!
ফোঁড়া (Abscess) কি জিনিস ?
একে আমরা তো বলি ফোঁড়া বা অ্যাবসেস(Abscess),কিন্তু এর ফাঁড়া আছে।ফুঁড়ে একবার বেরোলে আর রক্ষা নেই,একটু ভুগিয়েই ছাড়বে। তখন আনো রে গরম জল,আনো রে সেঁক,পুলটিশ,আনো রে ফোঁড়ার ওষুধ,পাউডার এসব।কিন্তু এটা হয় কেন?
শরীরে ফোঁড়া কেন হয় ?
আসলে আমাদের শরীরে একটা নিজস্ব সেনাবাহিনী আছে জানোতো।তার নাম ইমিউনিটি সিস্টেম।এবার ধরো তোমার শরীরে বাইরে থেকে কোনো ব্যাকটেরিয়া পটাং করে ঢুকে পড়লো,ঢুকেই সে তো আর ক্ষান্ত থাকবে না,সে তার মতন করে ক্ষতি করতে আরম্ভ করবে।আর এই ব্যাকটেরিয়াকে গো ব্যাক বলতে চলে আসবে আমাদের শরীরের রক্তে থাকা ডব্লুবিসি(WBC) বা হোয়াইট ব্লাড সেল।এরাই হলো বন্দুকধারী সেনা।
রক্তের দেশে কোনো গোলমাল দেখলে,বাইরের শত্রুর আক্রমণ দেখলে এরা অস্ত্রশস্ত্র হাতে নেমে পড়ে শত্রুধ্বংস করতে। এবার শরীরের ভিতর রক্তদলে আর ব্যাকটেরিয়াদলে যুদ্ধ হবে।কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলবেনা।এত বড় যুদ্ধে দুপক্ষের বেশ কিছু লাশ পড়বেনা তা কি হয়?আর যেখানটা যুদ্ধ হবে সেখানকার কলাকোশে একটু ক্ষত হবেনা তা কি হয়?সেই ক্ষতমার্কা কলাকোশের যে গর্তটা হবে সেখানে লাশগুলোকে ফেলতে হবে,আর এখানেই জমবে লাশের পাহাড়!
কে কে? না যুদ্ধে মৃত কলাকোশের অংশ,কিছু সাদা রক্তকণিকা আর মৃত ব্যাকটেরিয়ার দল।এরা মরে মরে জমবে,জমতে জমতে তৈরি করবে পুঁজ বা পাস(Pus)।এই পুঁজটাই কিন্তু ফোঁড়া ফেটে পড়া রস যেটাকে তোমরা বাইরে বেরোতে দেখতে পাও।
এবার এই ফোঁড়া কত ধরনের হয় একটু শোনো
এরা দুই ধরনের সারফেস অ্যাবসেস(চামড়ার উপর হয়,Surface of skin) আর ইন্টারনাল অ্যাবসেস(শরীরের ভিতরে হয়, internal organs)। ভাবছো শরীরের ভিতরে আবার ফোঁড়া?হয় হয়,আসছি সে কথায়।
ত্বকের উপর ফোঁড়া তো তোমরা দেখতেই পাও,কেমন লালচে ভাব চারদিকে,গরম হয়ে থাকে,শরীরে কেমন একটা অস্বস্তি জ্বরভাব হয় মাঝে মাঝে,আর হয় ব্যথা।
এই সমস্তকিছুকে একসাথে বলে ইনফ্ল্যামেশন(inflammation)।এর ভিতরে আরো কথা আছে তোমাদের এখন লাগবেনা সেসব।অনেক কারণেই এই ইনফ্ল্যামেশন দেখা যায়।
কিন্তু ভিতরের ফোঁড়াটা আবার অনেকরকম কারণে হতে পারে।দীর্ঘদিন ধরে কোনো জীবাণুঘটিত রোগ ভিতরে ভিতরে বেড়ে উঠলে যেমন ধরো অ্যাপেন্ডিসাইটিসের সময় হঠাৎ যদি অ্যাপেএনডিক্স ফেটে যায় সেক্ষেত্রে সমস্ত ব্যাকটেরিয়া আমাদের শরীরের ভিতরে রক্তে মিশে গেলে ভিতরের কোনো অঙ্গে ফোঁড়া হতে পারে।
আবার বাইরের বিভিন্ন জায়গায় যেমন ডেন্টাল অ্যাবসেস (দাঁতের গোড়ায় পুঁজ জমে ফোঁড়া), পেরিটনসিলার অ্যাবসেস (টনসিল আর গলার দেওয়ালের মাঝে ফোঁড়া),ব্রেন অ্যাবসেস(মাথার ভিতরে স্কাল বোন আর মাংসের মাঝের ফোঁড়া),স্পাইনাল কর্ডের অ্যাবসেস (শিরদাঁড়ার একপাশে বা দুপাশে ফোঁড়া),পাইলোনিডাল অ্যাবসেস(পাছাটা যেখানে কোমরের নীচে দুভাগ হয় সেখানে ফোঁড়া) এইসব আর কি।
তবে এদেরও আবার বিভিন্ন কারন আছে। অ্যাবডোমিনাল ফোঁড়া পেটের ভিতরে নানান ইনফেকশন যেমন কোলনের ক্ষত,ইনটেস্টাইনের লিকেজ,ওভারির ইনফেকশন এসবের জন্য হয়। অ্যামিবিক লিভার অ্যাবসেস এন্টামিবা হিস্টোলাইটিকা নামের একরকম প্যারাসাইটের প্রভাবে হয়ে থাকে,বিশেষ করে অ্যামিবিয়েসিস নামক অবস্থার জন্য বা তারপর। অ্যানোরেকটাল অ্যাবসেস যেটা STD বা পায়ুছিদ্রের কাছে ক্ষত,ওখানকার কোনো ইনফ্লেমেটরি অবস্থার জন্য হয়।
বার্থোলিন অ্যাবসেস যেটা মেয়েদের ক্ষেত্রে যৌনাঙ্গের উপরে অবস্থিত বার্থোলিন গ্ল্যান্ডের ইনফেকশনের বা গ্ল্যান্ডের মুখটা বন্ধ হয়ে যাবার জন্য হয়। এপিডিউরাল অ্যাবসেস যেটা মস্তিস্কের বা স্পাইনাল কর্ডের মেমব্রেনের মাঝে দেখা যায় যেটা ম্যাসটয়েডাইটিস(কানের পিছনে ম্যাসটয়েড প্রসেসের ইনফেকশন,বাচ্চাদের খুব হয়),কানের ইনফেকশন,মাথার কোনো আঘাতের ফলে হয়।
এছাড়া চামড়ার সাবকিউটেনিয়াস স্তরে ফলিকিউলাইটিস মানে ফলিকল্(লোমের গোড়ার ইনফ্লেমেশন)এর জন্যও কিন্তু অ্যাবসেস হয়। তাহলে ভাবো ফোঁড়ার কিন্তু ফাঁড়া কম নয়।তবে তোমরা যেন ফোঁড়া হলে ভয় পেও না।আর কারোর যদি খুব ঘনঘন গায়ে হাতে পায় ফোঁড়া হতে থাকে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারবাবুর সাথে একবার কথা বলে নিও। আর তোমাদের এই লেখাটার নামে একটা টাং ট্যুইস্টার দিলাম দশবার একটানা না থেমে সঠিকভাবে বলতে পারলে চেষ্টা করে দেখো:-“ফুঁড়ে ফোটা ফোঁড়া”… তাহলে আজকে ফোঁড়া থেকে মুক্তি দাও আমায়,আর তোমরাও থাকো ফোঁড়াহীন।