গোঁফহীন পুরুষ মানুষ আবার পুরুষ নাকি! এমনটিই বলা হত এককালে। মানুষের পরিচয়ই হয়ে যেত গোঁফের কারণে। আজো অবশ্য ভারতের পাঞ্জাবসহ বেশ কিছু স্থানে গোঁফ রাখার প্রচলন রয়েছে বংশপরম্পরায়। তবে বিশ্বের অনেক মানুষই সখের বশে গোঁফ রাখেন। (Mustache cup)
জানেন কি? তবে যদি শোনেন যে গোঁফ বাঁচাতে আবিষ্কার হচ্ছে কাপ। যাতে চা খাওয়ার সময় গোঁফ নষ্ট না হয়। তাহলে খানিকটা অবাক হতে হয় বৈকি।
এমনই এক চাঞ্চল্যকর কাপ আবিষ্কার হয়েছিল ভিক্টোরিয়ান যুগে গোঁফ বাঁচাতে। যার ফলে কোটিপতি হয়ে গিয়েছিলেন আবিষ্কারক। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক ব্যতিক্রমী এই কাপ সম্পর্কে-
একটা সময় ছিল যখন পুরুষরা আজকালের তুলনায় তাদের গোঁফের প্রতি অনেক বেশি মনোযোগ দিত। দৈনন্দিন ছাঁটাই এবং বিশেষ মোমের ব্যবহার ছাড়াও ভিক্টোরিয়ান যুগে গোঁফপ্রেমীরা তাদের গোঁফ সযত্নে রাখার জন্য পেয়েছিলেন এক অদ্ভুত সামগ্রী।মুসটাসে কাপ বা গোঁফ কাপ (Mustache cup)।
এই সময়ের ভদ্রলোকেরা গর্বের সঙ্গে গোঁফ রাখতেন। শুধু গোঁফ রাখলেই তো হবে না, তার পেছনে খাটুনিও তো করতে হয়। গোঁফ হতে হবে দৃঢ় এবং শক্ত।
সঠিকভাবে সাজানো থাকবে, খুব বেশি লম্বা করা যাবে না গোঁফ, আবার খুব ছোটও হবে। গোঁফ সোজা রাখার জন্য বিশেষ ধরনের মোম ব্যবহার করা হত। ভিক্টোরিয়ান যুগের লোকজন তাদের কোটের পকেটের ভিতরে এক বিশেষ চিরুনি বহন করতেন।
এই বিশেষ দুই ইঞ্চি লম্বা ভাঁজ করা চিরুনি প্রায়ই কচ্ছপের খোল ও রূপা দিয়ে তৈরি করা হত। ওই সময় পুরুষরা অনেকেই তাদের গোঁফ রং করতেন যাতে তাদের বয়ষ্ক না দেখায়।
যেহেতু ব্রিটেনে চা পান এক ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তাই সবাই দুশ্চিন্তায় পড়ে যাচ্ছিলেন। চা পান করা বা গোঁফ ত্যাগ করা, কোনোটিই সম্ভব নয়। কিছু একটা উপায় খুঁজে বের করা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছিল তখন। এমন সময় তৈরি হয় মুসটাসে কাপ বা গোঁফ কাপ।
More:- Artificial Human Embryo বিশ্বে এই প্রথম বানানো সম্ভব হল গবেষণাগারে | জানুন বিস্তারিত |
হার্ভি অ্যাডামস নামের এক ব্রিটিশ মৃৎশিল্পী ১৮৬০ সালে গোঁফ কাপ আবিষ্কার করেন। দেখতে অনেকটা চায়ের কাপের মতো হলেও এতে গোঁফের জন্য একটা গার্ড থাকতো।
বিষয়টা বাস্তবে খুব সহজ, কাপের মুখের দিকে গোঁফের জন্য আলাদা একটা গার্ড রাখা থাকত। আর তার নিচের দিকে থাকত একটা আলাদা ছিদ্র। যা দিয়ে চা পান করা যেত। তবে এতে গোঁফ ভেজার বা মোম গলে যাওয়ার ভয় থাকতো না।
গোঁফ কাপ অল্পদিনের মধ্যেই তাৎক্ষণিক সাফল্য পেয়েছিল। সমগ্র ব্রিটেন জুড়ে এই কাপ ব্যাপকভাবে বিক্রি হতে থাকে। তারপর এই কাপ ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এরপর থেকে বিপুল পরিমাণে গোঁফ কাপ উৎপাদন শুরু হয়। আবিষ্কারক এত ধনী হয়ে ওঠেন যে তিনি এই চাঞ্চল্যকর আবিষ্কারের ১৫ বছর পর অবসর গ্রহণ করেন।
কাপ উৎপাদকেরা ক্রমশ ম্যাচিং প্লেট আনতে থাকেন বাজারে। এমনকি কিছু কাস্টম কাপ তৈরি করা হতে থাকে যাতে কাপের উপর মালিকের নাম লেখা থাকতো। কিছুদিনের মধ্যেই ব্রিটিশ, জার্মান, আমেরিকান এবং জাপানি গোঁফ কাপ তৈরি হতে থাকে। মুসটাসে কাপ বা গোঁফ কাপ, সেই আমলের পুরুষদের জন্য এক অপরিহার্য সামগ্রীতে পরিণত হয়ে উঠেছিল।