তেমন কিছু আহামরি চেহারা নয়৷ তবে বুদ্ধিতে সবাইকে ঘোল খাওয়াতে ওস্তাদ৷ এমনই ওস্তাদের কেরামতিতে তিনবার বিক্রি হয়েছিল তাজমহল৷ ৫৪৫ জন সাংসদ সহ পুরো সংসদ ভবনকেই বেচে দিয়েছিল সে৷ অসম্ভব বিক্রি ক্ষমতা ও খদ্দেরকে ঘোল খাওয়ানোর দক্ষতা৷ সবমিলিয়ে নটবরলালের কেরামাতিতে বার বার হয়রান হয়েছে পুলিশ৷
পুরো সংসদ ভবনটি বিক্রি করতে পারা তার কাছে যেন হাতের মোয়া৷ আর লাল কেল্লা বিক্রি ?
সে তো জলভাত৷ তাজমহলকেও ছেড়ে কথা বলেনি৷ নটবরলাল এমনই৷ দেশের অপরাধ জগতে এই নির্বিকার বিহারি গ্রাম মানুষটি এক বিস্ময়৷ তাবড় তাবড় গোয়েন্দা, অপরাধ বিশেষজ্ঞ তাকে দেখেছেন৷ পাকড়াও করেছেন৷ দিব্বি জেল ভেঙে পালিয়েছে নটবরলাল৷ চ্যালেঞ্জ করে প্রতিবারই একের পর জাতীয় স্মারককে বিক্রি করেছে৷ এও কি সম্ভব ? বিস্ময়কর এই অপরাধীর কাছে যেন সবই সম্ভব৷ তাই খদ্দের জোগাড় করতে বিলম্ব হয় না৷ অবলীলায় সেই খদ্দেরের মাথা চিবিয়ে বিক্রি করে দেয় খোদ রাষ্ট্রপতি ভবন৷ লোক ঠকানোর ব্যবসায় একবার নয় পরপর তিনবার তাজমহলকে বিক্রি করেছিল নটবরলাল৷ দুনিয়ার সপ্তম আশ্চর্য বলে কথা৷ তাও নটবরের বুদ্ধিতে দিব্বি বিকিয়ে গিয়েছিল৷ কে কিনছিলেন ? সেই মহান ব্যক্তির কথা প্রকাশ্যে আসেনি৷ তবে লক্ষাধিক টাকা রোজগার করেছিল নটবরলাল৷ একই কায়দায় এরপর তার হাত দিয়েই ‘বিক্রি’ হয়েছিল লালকেল্লা৷ তাও দু বার৷ সেবারেও প্রচুর অর্থের মালিক হয়েছিল এই ঠগ শিরোমনি৷
আসল নাম মিথিলেশ কুমার শ্রীবাস্তব৷ তবে পরিচিত নটবরলাল নামেই৷ বিহারের সিওয়ান বাহুবলী সাংসদ ও এলাকার ত্রাস মহম্মদ সাহাবুদ্দিনের নামে বিশেষ পরিচিত৷ তেমনই পরিচিত নটবরলালের এলাকা বলেও৷ লোক ঠকানোর কারবার কাকে বলে তা দেখিয়ে চমক তৈরি করাই তার নেশা৷ সিওয়ানের বাংরা গ্রামে জন্ম৷ পেশায় আইনজীবী৷ ঠকানোর খেলায় চিরশ্রেষ্ঠ বলেই তাকে মেনে নেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা৷ বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিদের সই জাল করতে ওস্তাদ নটবরলাল৷ তার কেরামতির ভয়ে সিঁটিয়ে থাকতেন দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতিরা৷ কে জানে কখন কার সই নিখুঁত জাল করে কী ভয়ানক কাণ্ড ঘটাবে নটবরলাল৷
অন্তত ১০০টি চিটিং কেস ও জোচ্চুরির মামলায় নটবরলালের পিছনে আঠার মতো লেগেছিল ৮টি রাজ্যের বিশাল পুলিশ বাহিনী৷ বিভিন্ন মামলায় তার সাজার সম্মিলিত মেয়াদ হয় ১১৩ বছর৷ কুছপরোয়া নেই নটবরলালের৷ ৯ বার ধরা পড়েও জেল ভেঙে পালিয়েছে৷ চলে গিয়েছে পুলিশের নাগালের বাইরে৷ ফের ধরা পড়েছে৷ ফের পালিয়েছে৷ জেল ভাঙা যেন তার কাছে কোনও কাজই নয়৷ মোট ২০ বছর জেল জীবন৷ বয়স বেড়েছে তবু অপরাধ মানসিকতা কমেনি৷
সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে ৮৪ বছর বয়সে নটবরলাল ধরা পড়েছিল ৷ অসুস্থতার ভান করে হাসপাতালে থাকার অনুমতি জোগাড় করে নটবরলাল৷ জেল থেকে হুইল চেয়ারে হাসপাতাল যাওয়ার মাঝেই ভোজবাজির মতো মিলিয়ে গিয়েছিল ঠগ শিরোমনি৷ সেই শেষবার তাকে দেখা গিয়েছিল৷ আর দেখা যায়নি নটবরলালকে৷ পরিবারের দাবি তার মৃত্যু হয়েছে৷ বিশ্বাস করতে পারেন নি পুলিশকর্তারা৷ তবে আর দেখাও যায়নি মি. নটবরলালকে৷
অপরাধ জগত নিয়ে গবেষকদের কাছে নটবরলাল চূড়ান্ত কৌতূহলের কেন্দ্র৷ কোন জাদুতে সে লোক ঠকিয়ে তাজমহল, লালকেল্লা, রাষ্ট্রপতি ভবন ও সংসদ ভবন বিক্রি করে মোটা টাকা রোজগার করেছিল তাই এক অবাক কাণ্ড৷