Smart Update24,By Syed Mosharaf Hossain
আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও উদ্ভাবক। যাকে দ্য ফাদার অফ দ্য ডেফ অর্থাৎ বোবাদের পিতা নামে ডাকা হতো। তবে টেলিফোনের অন্যতম আবিষ্কারক হিসেবেই তিনি সবচেয়ে বেশি পরিচিত।
শোনা যায়, ফোন কানে তুলেই উচ্চারিত Hello শব্দটি প্রথম উচ্চারিত হয়েছিল আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের মুখেই। হ্যালো তার বান্ধবীর নাম। পুরো নাম ছিল মার্গারেট হ্যালো। কথিত আছে ১৮৭৬ সালে টেলিফোন আবিষ্কারের পর তিনি তার বান্ধবী হ্যালোকেই প্রথম ফোনটি করেছিলেন। যদিও এই ইতিহাস নিয়ে বিতর্ক রয়ে গেছে।
বিতর্ক যাই হোক, আজ এই টেলিফোন আবিষ্কারকের ১৭৫তম জন্ম দিবস। ১৮৪৭ সালের ৩ মার্চ স্কটল্যান্ডের এডিনবরায় আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের সময় তার নাম ছিল আলেকজান্ডার বেল। তবে তার বয়স যখন দশ বছর তখন তিনি তার বাবার কাছে তার বড় দুই ভাইয়ের মধ্যনামের মতো একটি মধ্যনামের জন্য আবদার করেন। তার এগারোতম জন্মদিনে বাবা আলেকজান্ডার মেলভিল বেল তারই এক কানাডিয়ান বন্ধুর নাম অনুসারে ছেলের মধ্যনাম রাখেন গ্রাহাম। এর পর থেকেই তার নাম হয় আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল। তবে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুরা তাকে এলেক নামেই ডাকত।
গ্রাহাম বেলের বাবা, দাদা এবং ভাই সবাই একক অভিনয় ও বক্তৃতার কাজে জড়িত ছিলেন এবং তার মা ও স্ত্রী উভয়েই ছিলেন বোবা। কথা বলতে অক্ষম মানুষদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে তিনি অনেক গবেষণা করেছেন।
টেলিফোন উদ্ভাবনের আগে থেকেই তিনি শ্রবণ এবং কথন নিয়ে গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। ১৮৭৬ সালে তাকে প্রথম টেলিফোনের আবিষ্কারের জন্য মার্কিন পেটেন্ট সম্মানে ভূষিত করা হয়।
পরবর্তী জীবনে বেল আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেন যার মধ্যে রয়েছে উড়ো নৌকা এবং বিমানচালনবিদ্যা। ১৮৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বেল।
টেলিফোনের উদ্ভাবক আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল। অথচ এই টেলিফোনকেই তিনি ঝামেলা মনে করতেন। এজন্য নিজের গবেষণা ও অধ্যয়ন কক্ষে কোনো টেলিফোন রাখতেন না। বেল মারা যাওয়ার পর তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে আমেরিকার সকল টেলিফোনে এক মিনিটের জন্য অবিরাম রিং বাজানো হয়।
অন্যান্য ভাইদের মতো আলেকজান্ডারও ছোটবেলায় বাবার কাছ থেকেই শিক্ষা লাভ করেন। প্রথাগত শিক্ষার আঙিনা, স্কুলে তার ফলাফল খুব একটা ভাল ছিল না, তার মধ্যে প্রায়শই স্কুল কামাই দেওয়ার প্রবণতা দেখা গিয়েছে। বাবার উচ্চাশা সত্ত্বেও স্কুলের পাঠ্যবিষয়গুলোর প্রতি আলেকজান্ডারের কোনো আগ্রহই ছিল না বরং বিজ্ঞান এবং বিশেষ করে জীববিজ্ঞানে তার ভীষণ আগ্রহ ছিল।
স্কুল ত্যাগ করার পর আলেকজান্ডার তাঁর দাদার সাথে লন্ডনে চলে যান। লন্ডনে দাদার সাথে থাকার সময় পড়াশুনার প্রতি তার গভীর ভালবাসা জন্মায় এবং প্রায়শই তার দাদার সাথে বিভিন্ন বিষয়ের উপর তর্ক-বিতর্কের মাধ্যমে প্রশ্ন করে করে আলোচনা করতেন বিষয়গুলো নিয়ে। ফলে পড়াশুনার সময় তাদের ঘন্টার পর ঘন্টা আলোচনায় কেটে যাওয়ার ঘটনা হামেশাই ঘটত।
মাত্র ১৬ বছর বয়সেই আলেকজান্ডার শিক্ষানবিশ শিক্ষক হিসেবে স্কটল্যান্ডের ওয়েস্টন হাউস একাডেমিতে যোগ দেন। ১৮৬৮ সালে স্বপরিবারে কানাডা চলে যাওয়ার আগে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁর ম্যাট্রিকুলেশন সম্পন্ন করেছিলেন।
শিশুকাল থেকেই আলেকজান্ডার প্রাকৃতিক পরিবেশ সম্পর্কে অত্যন্ত কৌতূহলি ছিলেন এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি পরীক্ষানিরীক্ষা করার জন্য বিভিন্ন উদ্ভিদের নমুনা সংগ্রহের বিষয়ে প্রবল আগ্রহ ছিল। ছোটবেলায় আলেকজান্ডারের সবচেয়ে ভাল বন্ধু ছিলেন বেন হের্ডম্যান এবং তারা একটি ময়দা মিল চালাত। একবার আলেকজান্ডার প্রশ্ন করেছিলো যে, ময়দা প্রস্তুত করতে হলে কী কী করতে হয়? উত্তরে তাকে বলা হয়েছিলো যে, পরিশ্রমসাধ্য এক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গমের খোসা ছাড়িয়ে ময়দা প্রস্তুত করতে হয়। কিন্তু, কীভাবে বিষয়টি সহজে হতে পারে এ নিয়ে আলেকজান্ডার গভীর ভাবে স্টাডি করতে লাগলেন এই ভেবে যে এর একটা বিহিত করা দরকার।
ভাবা মাত্রই কাজ। মাত্র ১২ বছর বয়সে পেরেকের ব্রাশ এবং ঘুর্ণায়মান প্যাডেলের সমন্বয়ে আলেকজান্ডার একটি গম পেষাই যন্ত্র তৈরি করেন, যা ঐ মিলে অনেক বছর ধরে ব্যবহার করা হয়েছিল। এই উদ্ভাবনের জন্য জন হের্ডম্যান আলেকজান্ডার এবং বেনকে নতুন নতুন জিনিস উদ্ভাবন করার জন্য একটি ওয়ার্কশপ উপহার দেয়।
বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার সংগীতেও তার ঝলক দেখিয়েছেন। কোনোরকম প্রথাগত প্রশিক্ষণ ছাড়াই অনেক অল্প বয়সে তিনি একজন পিয়ানোবাদক হয়ে ওঠেন। শৈশবে তিনি মুখাভিনয় এবং বিভিন্ন প্রকারের শব্দ উৎপাদনের মাধ্যমে পরিবারে আগত অতিথিদের মনোরঞ্জন করতেন। এককথায় বলা যায় সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে তিনি যথেষ্ট পটু ছিলেন এবং বলা যায় প্রথাগত শিক্ষা না থাকলেও যে একজন মানুষ বহুমুখী দক্ষ উদ্ভাবনী ক্ষমতার অধিকারী হতে পারেন তার জীবন্ত উদাহরণ হলেন গ্রাহাম বেল।