Smart Update24, By Syed Mosharaf Hossain
এই ফেব্রুয়ারি মাসে মঙ্গল গ্রহকে ঘিরে তিনটি বড় ঘটনা ঘটেছে। প্রথমত এ মাসের ৯ তারিখে মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে পৌঁছে গেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের নভোযান “আল- আমাল”। এই নভোযানের কাজ হবে মঙ্গল গ্রহকে প্রদক্ষিণ করে এর বায়ুমণ্ডলের গঠন সম্বন্ধে তথ্য ও উপাত্ত পৃথিবীতে পাঠানো। এটি অনেকটা কৃত্রিম উপগ্রহের মত। এদেরকে বলা হয় অরবিটার প্রোব। এই মহাকাশযানটি মঙ্গলগ্রহে অবতরণ করবে না।
দ্বিতীয়ত, এ মাসের ১৮ তারিখে মঙ্গল গ্রহে সফলভাবে অবতরণ করেছে নাসার মনুষ্যবিহীন রোভার পার্সিভিয়ারেন্স, যার সংক্ষিপ্ত নাম হলো পার্সি। এর আগেও মঙ্গল গ্রহে নাসা চারটি রোভার পাঠিয়েছিলো। এই রোভারগুলোর কাজ হলো মঙ্গলপৃষ্ঠে চরে বেড়িয়ে সেখানকার ভূ-প্রকৃতির গঠন সম্বন্ধে বিভিন্ন তথ্য পৃথিবীতে পাঠানো। তবে আগের রোভার গুলোর তুলনায় নাসার নতুন রোভার পার্সি অনেক বেশি কর্মক্ষম এবং আধুনিক। পার্সির ভেতরে রয়েছে একটি অ্যাস্ট্রোবায়োলজি ল্যাব। এই রোবটিক ল্যাবে মঙ্গল গ্রহের মাটি পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পরীক্ষা করে দেখা হবে। সেখানে কোন অণুজীবের অস্তিত্ব থাকলে সেটা জানা যাবে। পার্সি রোভারের সাথে সংযুক্ত রয়েছে একটি ছোট্ট হেলিকপ্টার, এর নাম হলো ইনজিনিউটি। এর ওজন মাত্র ১.৮ কিলোগ্রাম। এই হেলিকপ্টারটিকে আর কিছুদিন পরেই মঙ্গলের আকাশে পরীক্ষামূলকভাবে উড়ানো হবে।
মজার ব্যাপার হলো, এ দুটো ছাড়াও আরেকটি মহাকাশযানও কিন্তু এ মাসে মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে পৌঁছে গেছে। এটি পাঠিয়েছে চীন দেশের মহাকাশ সংস্থা চায়না ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (CNSA)। এটি নিয়ে প্রচার হয়েছে কম। এই নভোযানটির নাম হলো “তিয়ান ওয়েন ১”। এটি একটি রোবটিক নভোযান। অরবিটার ছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে একটি ল্যান্ডার এবং রোভার। এই নভোযানটি আগামী কয়েক মাস মঙ্গল গ্রহকে ঘিরে প্রদক্ষিণ করবে। তারপর আগামী মে অথবা জুন মাসে সময় সুযোগ বুঝে ল্যান্ডারটিকে রোভারসহ প্যারাসুট দিয়ে মঙ্গল গ্রহের বুকে নামানো হবে। রোভারটি মঙ্গল গ্রহে তিন মাস পর্যন্ত কার্যকর ভাবে বিচরণ করতে পারবে বলে চীনা বিজ্ঞানীরা আশা করছেন।
এটি সফল হলে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের পর চীন হবে মঙ্গল গ্রহে অবতরণকারী তৃতীয় দেশ। চীন সম্প্রতি মহাকাশ বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিতে যথেষ্ট অগ্রগতি লাভ করেছে। তাদের এই সাম্প্রতিক মঙ্গল যাত্রা সেটাই প্রমাণ করে।
এদিকে স্পেইস এক্সের প্রতিষ্ঠাতা এলন মাস্ক ব্যস্ত রয়েছেন তাঁর নতুন রকেট স্টারশিপ নিয়ে। এটি হলো স্পেইস এক্সের নতুন প্রযুক্তির পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট। স্পেইস এক্স এই বিশাল রকেট দিয়েই কম খরচে মঙ্গল গ্রহে পৌঁছতে চায়। সেজন্য এর প্রোটোটাইপ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। দুঃখের বিষয় হলো, সম্প্রতি স্টারশিপ রকেটের দুটো প্রোটোটাইপ পরীক্ষামূলক অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয়েছে। কিন্তু এলন মাস্ক দমবার পাত্র নন। তৃতীয় প্রোটোটাইপটির পরীক্ষা আর কিছুদিন পরেই করা হবে। এভাবেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তিনি স্টারশিপকে প্রস্তুত করছেন ভবিষ্যতে মঙ্গল গ্রহে অভিযান চালানোর জন্য। এ ব্যাপারে তিনি কোনো ছাড় দিতে প্রস্তুত নন। তিনি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই (২০২৬) মঙ্গলে মনুষ্যবাহী স্টারশিপ পাঠাতে চান বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা আগামী পাঁচ বছরে না হলেও, আগামী দশকের ভেতর মঙ্গল গ্রহে মানুষের পৌঁছে যাওয়াটা বিচিত্র কিছু নয়।
মঙ্গল গ্রহে রকেট পাঠানোর মত প্রযুক্তি এখন বেশ কয়েকটি দেশের হাতে রয়েছে। এই দেশগুলো হলো, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, জাপান, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, ভারত এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। এছাড়াও অন্যান্য অনেক দেশও এ ব্যাপারে আগ্রহী। বেসরকারি উদ্যোক্তারাও মঙ্গল যাত্রায় বিনিয়োগ করছেন। তবে এ ব্যাপারে প্রযুক্তির দিক দিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। চীন এবং রাশিয়াও খুব পিছিয়ে নেই। তারাও মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। এসব প্রচেষ্টা সফল হলে আমরা হয়তো আমাদের জীবদ্দশায়ই মঙ্গলের বুকে মানুষের পদচারনার দৃশ্য দেখতে পাবো। মানুষের ইতিহাসে তখন একটি নতুন যুগের সূচনা হবে।
এই সম্পর্কে আরো কিছু জেনে থাকলে কমেন্টবক্সে জানাবেন নিশ্চয়ই…