আমাদের দেশে প্যারাসিটামল (Paracetamol) বেশ পরিচিত ও বহুল ব্যবহৃত একটি ওষুধ। ব্যথা ও জ্বর নিরাময়ে Paracetamol নিরাপদ একটি ওষুধ; তাই আমরা এটি খুব বেশি খেয়ে থাকি। তবে অকারণে বা অল্প সমস্যাতেই Paracetamol খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ যেকোনো ওষুধের অনিয়ন্ত্রিত ডোজ আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ।
আসুন জেনে নিই প্যারাসিটামল সম্পর্কে কিছু জরুরি তথ্য-
১. ব্যবহারের দিক থেকে বেদনানাশক ওষুধ সাধারণভাবে দুই ভাগে বিভক্ত। একটি নারকোটিক বেদনানাশক ওষুধ। যেমন-মরফিন, প্যাথিড্রিন ইত্যাদি। এগুলো মাদকজাতীয় ও আসক্তি তৈরি করে। এ জাতীয় ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গ্রহণ সম্পূর্ণভাবে নিষেধ। আরেকটি মাদকবিহীন বেদনানাশক ওষুধ। এ গ্রুপে অনেক ওষুধের সঙ্গে প্যারাসিটামল ও অ্যাসপিরিনও রয়েছে।
২. শরীরের সাধারণ ব্যথা বা সোমাটিক পেইনে অন্যান্য ওষুধের চেয়ে আমরা প্যারাসিটামলই ব্যবহার করে থাকি। মাথাব্যথা, গলাব্যথা, পেশির ব্যথা, দাঁতের ব্যথা, ঋতুকষ্ট ইত্যাদিতে প্যারাসিটামল খুবই কার্যকর।
৩. জ্বরের চিকিৎসায় প্যারাসিটামল একটি পরিচিত ওষুধ। প্যারাসিটামল ওভার কাউন্টার বা ওটিসি হিসেবে পরিচিত বলে এটি চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া যে কেউ কিনতে পারে।
৪. প্যারাসিটামল গ্রহণের ক্ষেত্রে এর ডোজ সম্পর্কে অবশ্যই আমাদের জানতে হবে। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৫০০ মিলিগ্রামের ট্যাবলেট একটি, কখনো প্রয়োজনে দুটি একসঙ্গে খাওয়া যায়। ২৪ ঘণ্টায় সাধারণত তিনটি থেকে চারটি ওষুধ খাওয়া যাবে। অবশ্যই মনে রাখতে হবে ২৪ ঘণ্টায় ৪০০০ মিলিগ্রামের বেশি প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে না।
৫. শিশুর ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওজন অনুযায়ী প্যারাসিটামল সিরাপের ডোজ খাওয়াতে হবে। চার গ্রাম হচ্ছে সর্বোচ্চ মাত্রা।
৬. ব্যথা বা জ্বরের জন্য তিন দিন পর্যন্ত Paracetamol খেতে পারেন। এতে উপকার না হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অন্যান্য ওষুধ খেতে হবে।
৭. প্যারাসিটামল ওষুধের তেমন কোনো বড় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তবে কারো কারো রক্তের প্রয়োজনীয় উপাদানগুলোর অভাবে চামড়ায় সমস্যা হতে পারে।
৮. মনে রাখতে হবে, নির্দিষ্ট ডোজের চেয়ে বেশি প্যারাসিটামল গ্রহণ করা ঠিক নয়। কারণ বেশি মাত্রায় প্যারাসিটামল গ্রহণ করলে কিডনি ও লিভারের ক্ষতির ঝুঁঁকি বেড়ে যায়।
৯. অনেকেই ২৪ ঘণ্টায় ১০ থেকে ১২টি ৫০০ মিলিগ্রামের Paracetamol খেয়ে থাকেন। এটি মোটেও উচিত নয়। অবস্থা গুরুতর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে দিনে সর্বোচ্চ আটটি প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে।
১০. যাদের কিডনি ও লিভারের সমস্যা আছে, তাদের প্যারাসিটামল কম খাওয়াই ভালো।